ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা আগমন, রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও ব্যস্ত সূচি

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা আগমন, রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও ব্যস্ত সূচি

বিশেষ সংবাদদাতা

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে শনিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগমনের পর তিনি শুক্রবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির বিষয়ে খোঁজ নেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এবং সহায়তা ও সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তোবগে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি ও সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে তাকে অস্থায়ী সালাম মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলে ১৯ দফা তোপধ্বনি ও গার্ড অব অনারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা প্রদান করা হয়।

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণের পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সফরের এই অংশটি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক সম্মানের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দুপুরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি ও পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা আরও গভীর করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষত, আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি, জলবায়ু অভিযোজন এবং বাণিজ্য সহজীকরণ—দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠকেরও সূচি রয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, শুল্ক সুবিধা, কৃষিপণ্য রপ্তানি, সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ খাতে সম্ভাব্য নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য সংযোগের নতুন দিক উন্মোচনে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিকেল ৩টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে শেরিং তোবগে ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগিতা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পরিবেশ সুরক্ষা–সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষত, জলবায়ু পরিবর্তন ও পার্বত্য অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন–সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সন্ধ্যায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হবে। এতে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে যাবে। সফরকালে উভয় দেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশের সম্ভাবনাও রয়েছে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে এ সফর ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ