জাতীয় ডেস্ক
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকায় আবারও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে হওয়া এই স্বল্পমাত্রার কম্পন নগরের বিভিন্ন এলাকায় স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭। দিনজুড়ে এটি ছিল দ্বিতীয় ভূকম্পন, যা সাম্প্রতিক সময়ে পরপর কয়েকটি কম্পন অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দিনের প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে। সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলা। দিনের দুই দফা ভূকম্পন রাজধানীসহ আশপাশের জনবসতিতে ভূমিকম্প-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার পুনরুত্থান ঘটিয়েছে।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫ দশমিক ৭ মাত্রার অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নরসিংদীর মাধবদীকে কেন্দ্র করে হওয়া ওই কম্পনটির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভবন কেঁপে ওঠে এবং অনেক স্থানে মানুষ নিরাপত্তার জন্য বাইরে বের হয়ে আসে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাজ করছে।
সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিক ভূমিকম্পের কারণে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নিকটবর্তী সক্রিয় ফল্টলাইনগুলো সাম্প্রতিক কম্পনগুলোর উৎস হতে পারে। বাংলাদেশ ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় মাঝেমধ্যেই স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক কম্পন অনুভূত হওয়ায় ভূমিকম্প প্রস্তুতি, ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা এবং জরুরি সাড়াদান ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য হারে উচ্চ ভবনসমৃদ্ধ হওয়ায় সামান্য মাত্রার কম্পনও নগরবাসীর মধ্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নগরের জনসংখ্যার ঘনত্ব, পুরোনো ভবনের সংখ্যা এবং সংকীর্ণ রাস্তার কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সাম্প্রতিক কম্পনগুলো সেই আশঙ্কাকে আরও স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে।
ভূমিকম্প-সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁদের মতে, ভবন নির্মাণে নির্ধারিত কোড অনুসরণ, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রণয়ন, জরুরি উদ্ধার কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গণসচেতনতা জোরদার করা ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ও নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া পরিচালনার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
নরসিংদী অঞ্চলে পরপর কম্পন অনুভূত হওয়ায় স্থানীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোও উৎসস্থল নির্ধারণ, ভূগর্ভের চাপের মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য পরবর্তী কম্পনের পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছে। ভূমিকম্পের মাত্রা তুলনামূলক কম হলেও, উৎপত্তিস্থল রাজধানীর নিকটে হওয়ায় এর প্রভাব দ্রুত ও ব্যাপকভাবে অনুভূত হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি পরবর্তী সম্ভাব্য অবস্থান বা কম্পনের ঝুঁকি মূল্যায়ন করছে।
সাম্প্রতিক তিন দফা কম্পনের প্রেক্ষাপটে নগরবাসীর মধ্যে সতর্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না হলেও, ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি, কাঠামোগত নিরাপত্তা এবং সচেতন নাগরিক ভূমিকার গুরুত্ব ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে।


