রাজধানীর বিজয়নগরে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ড, দ্রুত নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস

রাজধানীর বিজয়নগরে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ড, দ্রুত নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস

রাজধানী ডেস্ক

রাজধানীর বিজয়নগরে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ভবনটির ষষ্ঠতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে ঘটনাস্থলে জরুরি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম অনুযায়ী, বিজয়নগরের আত্-ত্বরীক টাওয়ার নামের ওই দশতলা বাণিজ্যিক ভবনের ষষ্ঠতলায় হঠাৎ ধোঁয়া দেখা গেলে ভবনে অবস্থানরত ব্যক্তিরা বাইরে চলে আসেন। পরে রমনা থানা কর্তৃপক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসে তথ্য পৌঁছালে প্রথমে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যাত্রা করে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে আরও তিনটি ইউনিট যুক্ত করা হয়। দ্রুত সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।

আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ভবনের ভেতরের ব্যবসায়ীরা ও কর্মীরা বাইরে নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। বহু মানুষ সিঁড়ি ব্যবহার করে নেমে আসেন এবং ভবনের সামনের এলাকায় ভিড় করেন। ফায়ার সার্ভিস ভবনের চারপাশ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং মানুষকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। ভবনের ভেতরে কেউ আটকা পড়েছেন কি না—তা যাচাই করতে ইউনিটগুলো তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, আগুন লাগার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ইউনিট পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আগুন যে তলায় লেগেছিল, সেখানে বিভিন্ন ধরনের অফিস কক্ষ ছিল। আগুন কোন কক্ষ থেকে কীভাবে শুরু হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তদন্ত দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।

এ ধরনের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে—যেমন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, পুরনো বৈদ্যুতিক লাইন, অতিরিক্ত লোড বা অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ভবনের বিভিন্ন অংশে স্থাপিত ফায়ার অ্যালার্ম, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র ও আগুন নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করেছে কি না, তা তদন্তের আওতায় আসবে।

অগ্নিকাণ্ডের পর এলাকাজুড়ে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলের সামনের প্রধান সড়কে গাড়ি ও পথচারীদের ভিড় বাড়তে থাকে, যার কারণে পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনের আশেপাশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও ভবনের অভ্যন্তর পরিদর্শন কার্যক্রম চলতে থাকায় কিছু সময় ধরেই এলাকা আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়।

বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। এ ধরনের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা সাধারণত ভবনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা মূল্যায়ন করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত মহড়া, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার এবং কর্মীদের সচেতনতা বাড়ানো গেলে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভবনের ভেতরের তাপ ও ধোঁয়ার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কিছু সময় লাগবে। তল্লাশি ও নিরাপত্তা মূল্যায়ন শেষ হওয়ার পর ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। বর্তমানে ভবনের ভেতরের কাঠামোর ক্ষতি, নথিপত্র বা সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার ফল বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তারা জানান, ভবনের কর্মীরা দ্রুত সরে যেতে পারায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। পুরো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তদন্ত শেষে জানানো হবে।

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকায় এ ধরনের আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড শহুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। ভবিষ্যতে নিরাপত্তা জোরদার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং জরুরিকালীন প্রস্তুতি আরও গুরুত্ব পাবে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ