জাতীয় ডেস্ক
সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও ধারাবাহিক আফটার শকের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দুই সপ্তাহের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি আবাসিক হলগুলোর কাঠামোগত নিরাপত্তা যাচাই ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিন্ডিকেট সদস্য ছাড়াও চিকিৎসা অনুষদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যোগ দেন। সভায় ভূমিকম্প-পরবর্তী সামগ্রিক পরিস্থিতি, শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হয়।
সভার আলোচনায় জানানো হয়, পরপর কয়েকদিন ভূমিকম্প ও এর পরবর্তী ঝাঁকুনি অনুভূত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু আবাসিক ভবনের কাঠামোগত অবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগও সভায় উপস্থাপন করা হয়। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলে বিস্তারিত পরিদর্শন ও ঝুঁকি মূল্যায়ন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
সভায় বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়টি অবকাঠামোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি শনাক্ত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পুরোনো এবং অধিক ব্যবহৃত ভবনগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ফাটল, ভিত্তি দুর্বলতা বা অন্যান্য কাঠামোগত সমস্যার ঝুঁকি থাকতে পারে। এসব বিষয় প্রাথমিকভাবে শনাক্ত না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ কারণে আবাসিক ভবনগুলো খালি করে প্রতিটি কক্ষ ও ব্লকের পৃথক মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
সিন্ডিকেট সভায় এসব মতামত বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৫টার মধ্যে সব আবাসিক হল খালি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষদের দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে হল ত্যাগে সহায়তার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
যদিও একাডেমিক কার্যক্রম ও হল পরিচালনা বন্ধ থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরগুলো নিয়মিত খোলা থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, ভবনসমূহের কাঠামোগত পরিদর্শন, সংস্কার পরিকল্পনা, বাজেট অনুমোদন ও অন্যান্য জরুরি বিষয় সম্পাদনের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখা জরুরি।
সভার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের একজন প্রতিনিধির বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং এই উদ্বেগ প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সেই প্রেক্ষিতে প্রশাসন দ্রুত জরুরি সভা আহ্বান করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আবাসিক হলগুলো খালি করার পর প্রকৌশল দপ্তর এবং বিশেষজ্ঞ দল একযোগে প্রতিটি হলের কাঠামোগত সক্ষমতা যাচাই করবে। এসব পরীক্ষার মধ্যে থাকবে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়, ভিত্তির স্থায়িত্ব যাচাই, ভবনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দেয়ালে ফাটল শনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশদ ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা। সম্ভাব্য সংস্কার কাজের ধরন ও পরিমাণ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা মান আরও উন্নত হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব, এবং অতীতের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এনে এ ধরনের পূর্বসতর্কতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আবাসিক হলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র অবস্থান এবং প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা প্রদানের বিষয়েও বিভিন্ন দপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে, সংগঠিত ও সতর্কভাবে চলমান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীরা আরও নিরাপদ পরিবেশে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারবেন।


