ইডেন ছাত্রনিবাসে ভূমিকম্পে দেয়াল ফাটল শিক্ষার্থীদের রে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন

ইডেন ছাত্রনিবাসে ভূমিকম্পে দেয়াল ফাটল শিক্ষার্থীদের রে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় অনুভূত ভূমিকম্পের পর ইডেন মহিলা কলেজের হাসনা বেগম ছাত্রী নিবাসের কয়েকটি অংশে দেয়াল ফাটল ও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়। রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলকক্ষ ত্যাগ করে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন এবং ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেন।

হঠাৎ কম্পনে হলের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হওয়া এবং প্লাস্টার খসে পড়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষ্য করেন। এ অবস্থায় ভবনের স্থায়িত্ব ও বসবাসযোগ্যতা নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ফাটলগুলো আকস্মিক নয়; বরং পূর্ব থেকেই ভবনের কিছু অংশকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সেই আশঙ্কা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের পরপরই তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হলের কক্ষ থেকে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন। আবাসিক ভবনের উপরের তলাগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, কক্ষে থাকা অবস্থায় দেয়ালের অংশ বিশেষ নড়াচড়া অনুভূত হয় এবং কিছু জায়গার প্লাস্টার ঝরে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভবনের ভেতরে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় তারা সবাই নিচে নেমে আসেন।

পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, দিনের বেলায় দেখা যায়নি এমন ফাটল ভূমিকম্পের পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর ফলে তারা আশঙ্কা করছেন যে ভবনের কাঠামোগত স্থায়িত্ব হয়তো দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের দাবি, হলের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে তারা পূর্বেও প্রশাসনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক ক্ষতির কারণে দ্রুত পরিদর্শন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বাড়ছে।

এদিকে হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে সাময়িক বিকল্প ব্যবস্থার কথা জানায়। হল সুপারের বক্তব্য অনুযায়ী, রাতের পরিস্থিতিতে যদি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন, তবে তারা নিকটস্থ অন্য আবাসিক ভবনে সাময়িকভাবে অবস্থান করতে পারেন। প্রশাসন জানিয়েছে, পরের দিন সকালে ভবনের অবস্থা পরিদর্শন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

হল কর্তৃপক্ষের ধারণা, খসে পড়া অংশটি দীর্ঘদিন আগের দুর্বল জায়গা ছিল, যা ভূমিকম্পের প্রভাবে ভেঙে পড়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ভবনের অন্যান্য অংশেও একই ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে হলের কাঠামোগত মান ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করা জরুরি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল কতটুকু গভীর এবং তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত প্রয়োজন কি না।

এই ঘটনার পর আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কারিগরি মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সাধারণত সরকারি আবাসিক ভবনগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ষণাবেক্ষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়নের নিয়ম রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, আগের কোনো সময়ে এ ধরনের পরিদর্শন বা সংস্কার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। ভূমিকম্পের পর নতুন করে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় ভবনের বর্তমান অবস্থা যাচাইয়ে প্রকৌশলী দল পাঠানো প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো ভবনগুলোতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে ছোট ফাটলও সময়ের সঙ্গে বড় ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে বহুতল ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা মান বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনের কাঠামো কতটা চাপ সামলাতে সক্ষম, সেই বিষয়টিও নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাসে ঘটে যাওয়া এই পরিস্থিতি বৃহত্তর প্রেক্ষিতে নগরীর পুরনো ও মাঝারি অবকাঠামোসমূহের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে করিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীসহ আবাসিক এলাকায় বসবাসরত হাজারো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রত্যাশা করছেন। তারা মনে করছেন, ভবনের বিস্তারিত কারিগরি পরিদর্শন, সম্ভাব্য ঝুঁকির চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন হলে আবাসিক জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরবে। প্রশাসনও জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।

শিক্ষা