রাজধানী ডেস্ক
ঢাকার মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের উত্তরা অংশে লাইনের ওপর একটি ড্রোন পড়ে শনিবার সকালে মেট্রোরেল চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ড্রোনটি অপসারণের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে। ঘটনায় কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহত হয়নি।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে চলাচলরত ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকালেই রেললাইনে পতিত ড্রোনটি শনাক্ত করা হয়। নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে ওই অংশে ট্রেন চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়, যাতে লাইন পরীক্ষা এবং ড্রোন অপসারণের কাজ সম্পন্ন করা যায়। পরবর্তীতে ঝুঁকি মুক্ত ঘোষণা করা হলে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হয় এবং যাত্রীসেবা স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাইনের ওপর যেকোনো ধরনের আকাশপথে উড়ন্ত যন্ত্রের উপস্থিতি নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইন, বিধিনিষেধ এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া রয়েছে। এসব নিয়ম লঙ্ঘিত হলে তা জননিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এ ঘটনায় কেন এবং কীভাবে ড্রোনটি লাইনের ওপর পড়ল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা অতিরিক্ত তদন্ত পরিচালনা করবে।
মেট্রোরেল চলাচলে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি পৃথক ঘটনায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা অধিকতর সতর্কতা গ্রহণ করেছে। এর আগের দিন, শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর এলাকায় কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি অংশে মেট্রোরেল লাইনের ওপর দুটি সন্দেহজনক অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া যায়। লাইন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা নিয়মিত পরিদর্শনের সময় বস্তুগুলো চিহ্নিত করেন। পরে নিরাপত্তা বাহিনী তা অপসারণ করে এবং পুরো এলাকায় অতিরিক্ত তল্লাশি পরিচালনা করা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লাইনের ২৮৮ ও ২৮৯ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি অংশে জর্দার কৌটার ভেতরে টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ককটেল দুটি রাখা ছিল। এগুলো অবিস্ফোরিত থাকলেও রেললাইনের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারত। তবে ঘটনাটি দ্রুত শনাক্ত হওয়ায় লাইনের কোনো ক্ষতি হয়নি এবং স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় মেট্রোরেল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যাত্রী এ পরিবহনসেবা ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। ফলে এ ধরনের ঘটনায় নিরাপত্তা প্রটোকল আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। জননিরাপত্তা, অবকাঠামোর সুরক্ষা এবং ট্রেন চলাচলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নজরদারি ও ঝুঁকি মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের ওপর বা আশপাশে ড্রোন ব্যবহার করতে হলে পূর্বানুমতি আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া ড্রোন উড়ালে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পাশাপাশি মেট্রোরেল লাইন ও স্টেশনের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করতে নিয়মিত টহল এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, ক্যামেরা নজরদারি এবং প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা টিমের তৎপরতা আরও বর্ধিত করা হতে পারে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে রেল ব্যবস্থার নিরাপত্তা বজায় রাখা একটি বহুমাত্রিক দায়িত্ব। এতে অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়মিত পরিদর্শন, যাত্রীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং আইনি কাঠামোর কার্যকর প্রয়োগ—সবগুলোই সমন্বিতভাবে কাজ করে। সাম্প্রতিক ঘটনা দুটির পর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যৌথভাবে সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদারে কাজ করছে।
এ ঘটনায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছে যে, প্রতিটি ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতায়াত নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে এবং পূর্ণ ক্ষমতায় ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।


