সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী শিল্পীদের হয়রানি রোধে কঠোর শাস্তির দাবি হুমা কুরেশির

সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী শিল্পীদের হয়রানি রোধে কঠোর শাস্তির দাবি হুমা কুরেশির

 

বিনোদন ডেস্ক

সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী তারকাদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য, কুরুচিপূর্ণ বার্তা ও ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হয়রানির এ প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী হুমা কুরেশি। তার মতে, বাস্তব জীবনে যেসব অপরাধের জন্য আইনি শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে, অনলাইন ক্ষেত্রে একই ধরনের আচরণের প্রতিও একই মাত্রায় শাস্তির ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

সম্প্রতি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীদের পোশাক, জীবনযাপন বা কাজকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক ও অবমাননাকর মন্তব্যের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মত দেন ‘মহারানি’ সিরিজে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া এ অভিনেত্রী। তার বক্তব্যে তিনি অনলাইনে নারীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণের সামাজিক প্রভাব এবং আইনি দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

হুমা কুরেশি বলেন, অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ব্যবহারকারী নারী তারকাদের নির্দিষ্ট ধরনের ছবি পোস্ট করার অনুরোধ জানান। কিন্তু একই ব্যবহারকারীরা পরে সেই ছবিকেই সমালোচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন। তার মতে, এ ধরনের দ্বৈত আচরণ সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করে এবং তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে। তিনি আরও বলেন, যেভাবে জনসমক্ষে নারীদের উদ্দেশ্যে অবমাননাকর মন্তব্য করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ, অনলাইনেও একই ধরনের মন্তব্য বা বার্তা পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।

অভিনেত্রী তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ অবাঞ্ছিত ছবি বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পাঠালে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের শামিল। তাই এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিধিবদ্ধ শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে অনলাইন হয়রানি কমানো সম্ভব হবে। তিনি অনলাইন পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে নারীদের সমালোচনা নয়, বরং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানান। তার মতে, নারীরা কী পোশাক পরছেন, কখন বাড়ি ফিরছেন, বা কীভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করছেন— এসব বিষয় নিয়ে বিচার-সমালোচনা সমাজে বৈষম্য বাড়ায় এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল যোগাযোগের প্রসারের ফলে অনলাইন হয়রানির ধরন ও পরিসর বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে দ্বিধায় ভোগেন বা কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে তা সম্পর্কে সচেতন নন। ভারতের আইনে অনলাইন হুমকি, আপত্তিকর বার্তা ও শ্লীলতাহানি প্রতিরোধে বিশেষ বিধান রয়েছে; তবে বাস্তবে এ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত ও দ্রুত বিচার অনেক সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ফলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সচেতনতা এবং আইন প্রয়োগ— তিনটির সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের উদ্দেশ্যে নেতিবাচক মন্তব্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, অনলাইনে অবমাননাকর মন্তব্য বা বার্তা পাঠানোকে গুরুত্ব সহকারে বিচার করলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পরিবেশ উভয়ই আরও নিরাপদ হবে। বিশেষত, নারীদের বিরুদ্ধে সাইবার হয়রানির ঘটনা শুধু তাদের মানসিক চাপই বাড়ায় না, বরং পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

এদিকে অভিনয়জীবনে ব্যস্ত সময় পার করছেন হুমা কুরেশি। ওয়েব সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম থ্রি’ ও ‘মহারানি ফোর’-এ তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তাকে সমাজে নারীবিষয়ক আলোচনায় আরও সক্রিয় করে তুলেছে বলে শিল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজিক ইস্যুতে সরব হয়ে তিনি অনলাইন নিরাপত্তা ও নারী অধিকার সম্পর্কিত আলোচনাকে প্রধানধারায় তোলার চেষ্টা করছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার মানুষের যোগাযোগকে সহজ করলেও অনলাইন হয়রানির মতো সমস্যা নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সামাজিক আচরণগত পরিবর্তন— তিনটি দিক সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হুমা কুরেশির বক্তব্য এই আলোচনাকে নতুন করে সামনে এনেছে, যা ভবিষ্যতে অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার শৃঙ্খলা শক্তিশালী করার উদ্যোগগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।

বিনোদন