নিজস্ব প্রতিবেদক
দাড়িপাল্লা বাতিলের পেছনে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঝুঁকিকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আম জনতার দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওজন মাপার ক্ষেত্রে দাড়িপাল্লা ব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম ও প্রতারণার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এটি প্রচলন থেকে বাদ পড়েছে। এ বিষয়ে মত প্রকাশ করায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভিডিওবার্তায় তারেক রহমান বলেন, দাড়িপাল্লা ব্যবহার করে ওজন মাপার ক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল মাপ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাংস বা সবজি কেনার ক্ষেত্রে যদি কোনো দোকানে দাড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেখানে সুতায় প্যাচ দেওয়া বা দণ্ডকে হেলে ধরার মাধ্যমে ক্রেতাকে প্রতারিত করা সম্ভব। তার দাবি, এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ থাকায় দাড়িপাল্লা ধাপে ধাপে ব্যবহার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আধুনিক ওজন মাপার যন্ত্রের প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু দাড়িপাল্লার কাঠামো এমন যে তুলনামূলকভাবে সহজ পদ্ধতিতে ওজন পরিবর্তন করা যায়, তাই এটি নির্ভরযোগ্যতার সমস্যায় পড়ে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র এখন বাজারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মাপজোকের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করছে। তারেক রহমান আরও বলেন, ওজন মাপার প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে অনেক দেশেই আগেই দাড়িপাল্লা বাদ পড়েছে, যা এখন বাংলাদেশেও প্রতিফলিত হয়েছে।
ভিডিওবার্তায় তিনি রাজনৈতিক প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তারেক রহমান জানান, দাড়িপাল্লা নিয়ে তার বক্তব্যের পর কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মন্তব্য করেছেন যে তার ব্যক্তিগত অনুভূতি অনুযায়ী একটি দল ক্ষমতায় আসবে। এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে অন্যদেরও একমত হতে দেখা গেছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, এমন ধারণা যে কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে না এবং নির্বাচন বা ক্ষমতার পরিবর্তনসহ যেকোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত জনমতের ওপরই নির্ভরশীল হওয়া উচিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ধর্মীয় বক্তাদের কিছু মন্তব্য নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারেক রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এক বক্তব্যে দেখা গেছে, একজন বক্তা দাবি করছেন যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসন তাদের নির্দেশে কাজ করবে এবং মামলা গ্রহণ বা দায়েরও তাদের নির্দেশনার ভিত্তিতে হবে—যা তিনি অযৌক্তিক দাবি হিসেবে উল্লেখ করেন। তারেকের মতে, এ ধরনের বক্তব্য প্রশাসনিক স্বাধীনতা ও আইনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের আইন অনুযায়ী কাজ করে এবং কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত নির্দেশনা অনুসরণ করা তাদের দায়িত্ব নয়। এ ধরনের বক্তব্য প্রচারিত হওয়া জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের প্রশাসনিক কাঠামো আইন ও প্রক্রিয়ানির্ভর এবং সেই কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো বক্তব্য সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অনুকূল নয়।
ভিডিওবার্তায় তারেক রহমান সামগ্রিকভাবে দাড়িপাল্লা ব্যবহার, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে চলমান আলোচনা সম্পর্কে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও প্রশাসন—উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা প্রয়োজন। ওজন মাপার মতো সাধারণ একটি বিষয়ের ক্ষেত্রেও যেখানে প্রতারণার সুযোগ থাকে, সেখানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। একইভাবে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বক্তব্যের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে তা সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে, যা দেশের সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
তারেক রহমানের এই ভিডিওবার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দাড়িপাল্লা বাতিলের কারণ হিসেবে প্রতারণার সম্ভাবনা তুলে ধরা এবং রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে তার মন্তব্য বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। ভিডিওবার্তায় উত্থাপিত বিষয়গুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—এই তিন ক্ষেত্রে আলোচনার নতুন পরিসর সৃষ্টি করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


