নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার রাত সোয়া ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত টানা অভিযানের মাধ্যমে বাসিলা সেনা ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকায় এই গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগী শামসাদকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেনা সূত্র জানায়, ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করতে দ্রুতগতিতে অনুসন্ধান চালানো হয়। সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার স্থানসমূহ নজরদারির আওতায় এনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর রাতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সন্দেহভাজন ৯ জনকে আটক করা সম্ভব হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মো. সাজীব (২০), মো. রাজু (৩২), মো. সায়ন (১৮), মো. জাহিদ (২৫), মো. পৃথিবী (২৫), মো. সজীদ (২১), মো. সরফরাজ (২১), মো. কবির হোসেন (২২) এবং মো. বশির (৫৩)। অভিযানের পর তাদের মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর আর্মি ক্যাম্পের ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন। তারা জেনেভা ক্যাম্পকেন্দ্রিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেলের সহযোগী হিসেবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন বলে উল্লেখ করেন। সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে, ভুক্তভোগীর ওপর হামলা ছিল একটি পরিকল্পিত অপহরণ ও নির্যাতনচক্রের অংশ, যেখানে বিপজ্জনক মাদক ব্যবসায় জড়িত গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে থাকে।
অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর থানার কর্মকর্তারা জানান, তদন্তের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর প্রেক্ষাপট, অপহরণের উদ্দেশ্য, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্ভাব্য জড়িত থাকার মাত্রা এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় শনাক্ত করতে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় কিছু দুষ্কৃতিকারী চক্র অপকর্মের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই অভিযানের পর এলাকায় অপরাধ দমনে নতুন তথ্য প্রকাশ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী শামসাদ পরদিন মোহাম্মদপুর থানা এসে মোট ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। পুলিশ জানায়, মামলার এজাহারে উল্লেখিত অপরাধীদের মধ্যে এখনও পলাতক কয়েকজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পৃথক অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা অপহরণ ও চাঁদাবাজ চক্রগুলোর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান অপরাধ দমনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত অভিযানের ফলে মাদক ও দুষ্কৃতিকারী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা হ্রাস পেলেও কিছু সংঘবদ্ধ চক্র এখনও সক্রিয় রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সেনা কর্মকর্তাদের মতে, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য মিলেছে তার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আরও অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরাধচক্রের মূল সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও সুদৃঢ় করা যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় ঘটনার দ্রুত সুরাহা হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাটির প্রকৃত পটভূমি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


