ঢাবির বিজয় ৭১ হলে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে, তদন্তে কারণ উদঘাটনের প্রচেষ্টা

ঢাবির বিজয় ৭১ হলে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে, তদন্তে কারণ উদঘাটনের প্রচেষ্টা

 

জাতীয় ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলে লাগা অগ্নিকাণ্ড প্রায় বারো মিনিটের প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারটি ইউনিটকে বিজয় ৭১ হল এলাকার যমুনা ভবনের পেছনের এক্সটেনশনে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা আগুনের উৎস শনাক্ত করা, আগুনের বিস্তার রোধ এবং হলের ভেতরের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ একযোগে পরিচালনা করে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে আগুন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির দিকে যেতে পারেনি।

হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যমুনা ভবনের এক্সটেনশনে অবস্থিত একটি খাবারের দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। তবে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা লিকেজের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ এবং পর্যাপ্ত নজরদারির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেন।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ছাত্রাবাসের ভেতরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান। তারা জানান, ধোঁয়া ও আগুন প্রথমে এক্সটেনশন অংশে দেখা গেলেও তা যাতে অভ্যন্তরীণ কক্ষে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীরাও সতর্ক ভূমিকা পালন করেন। অনেক শিক্ষার্থী নিকটস্থ ভবনগুলোতেও অবস্থানরতদের সতর্ক করে দেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহায়তা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এক্সটেনশনে থাকা কিছু ব্যবসায়িক স্থাপনা ও সংলগ্ন কাঠামো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার, বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং দোকান পরিচালনার মতো বিষয়ের ওপর নতুন করে নীতিমালা পর্যালোচনার সম্ভাবনাও আলোচনায় এসেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো জনবহুল স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তার বিস্তার রোধে দ্রুত সংবাদ প্রদান ও তাৎক্ষণিক সাড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা দ্রুত আগুন লাগার বিষয়টি জানানোয় এবং এলাকা খালি করতে সহায়তা করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহজ হয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে ছাত্রাবাস এবং সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় অগ্নি-নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংখ্যা বাড়ানো, নিয়মিত মহড়া আয়োজন এবং গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ নজরদারি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী বা কর্মচারী আহত না হলেও ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে এবং সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে আবাসিক হলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, রান্নাঘর বা দোকান পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা ও কঠোর তদারকি চালুর বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় সৃষ্ট আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক ও সুসংহত উদ্যোগ প্রয়োজন। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত হলে ছাত্রাবাসের পরিবেশ আরও নিরাপদ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। বর্তমানে ঘটনাস্থল নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও প্রশাসন যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে।

Uncategorized জাতীয় শীর্ষ সংবাদ