আইন আদালত ডেস্ক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় এক যুবক নিহত এবং তার বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে ঢাকা উদ্যানের তিন নম্বর রোডের ডি ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই দু’জনকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ছেলে বাবুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাবা কাশেম বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, হামলার সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে কাশেম ও তার ছেলে বাবুর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, বাবু গুরুতর রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। অপরদিকে কাশেমের শরীরেও একাধিক জখম রয়েছে এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী ঘটনাটি পূর্ববর্তী বিরোধ বা স্থানীয় পর্যায়ে চলমান উত্তেজনার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। হামলাকারীরা এলাকার পরিচিত সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার পর এলাকায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি এলাকায় কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা দাবি করেন, কিছু চক্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, যার ফলে বিভিন্ন সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সোমবারের ঘটনা এরই ধারাবাহিকতা কিনা—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কাশেমকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর আঘাত রয়েছে, বিশেষ করে মাথা, পিঠ ও হাতের বেশ কয়েকটি জায়গায় গুরুতর ক্ষত তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হবে।
স্বজনদের বরাতে পুলিশ জানায়, কাশেম ও তার ছেলে বাবুর সঙ্গে কিছু ব্যক্তির দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কয়েক মাস আগে এই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিবার দাবি করেছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা চালানো হতে পারে। পুলিশ বলছে, এসব অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে যাচাই করা হচ্ছে এবং ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং হামলাকারীদের ধরতে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ চলছে। পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় কারা লাভবান হতে পারে এবং বিরোধের পরিধি কতটুকু—সেসব দিকও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তারা বলেন, ঘটনাটি একক বা তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফল নয়; বরং এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় পর্যায়ে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমন হামলার ঘটনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত অভিযান, এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে দ্রুত বিচার এবং নিয়মিত টহলের দাবিও তুলেছেন। তারা মনে করেন, ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন না হলে এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, কাশেম সুস্থ হলে তার কাছ থেকেও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত অগ্রগতি অনুযায়ী সম্ভাব্য আরও গ্রেপ্তারের বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, প্রযুক্তিগত তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
মোহাম্মদপুর এলাকায় হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


