আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে মধ্যরাতে পরিচালিত পাকিস্তানের বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে নয়জন শিশু এবং একজন নারী রয়েছে। একই সময়ে দেশটির উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের আরও কয়েকটি প্রদেশেও হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, সোমবার গভীর রাতে খোস্তের গোরবুজ জেলায় স্থানীয় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তার দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান থেকে বাড়িটিতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়, যা সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হামলার সময় বাসিন্দাদের অধিকাংশই ঘুমিয়ে ছিলেন, ফলে শিশুদের ব্যাপক প্রাণহানী ঘটে।
তালেবান মুখপাত্রের বক্তব্যে বলা হয়, নিহত নয় শিশুর মধ্যে পাঁচজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে। একই পরিবারের সদস্য হিসেবে তারা বাড়িটিতে অবস্থান করছিল। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন। হামলার ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করে।
এ ছাড়া তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, একই রাতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুনার ও পূর্বাঞ্চলের পাকতিকা প্রদেশেও পৃথক বিমান হামলা হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত চারজন বেসামরিক নাগরিক আহত হন। আহতদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতি ও হামলার অভিযোগে দুই দেশের সম্পর্ক প্রায়ই তিক্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়ে আবার আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়ে আসছে যে, তারা কোনো দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের সহায়তা করে না এবং সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাম্প্রতিক হামলাগুলো এমন এক সময় ঘটল, যখন দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। সীমান্তের ডুরান্ড লাইন ঘিরে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বহু দশক ধরে চলমান। এই প্রেক্ষাপটে বিমান হামলার মতো ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
এই হামলার ঘটনায় তালেবান প্রশাসন কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ ধরনের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তারা দাবি করেছে, শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে শিশু ও নারীর মৃত্যু ভবিষ্যতে মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি ইতোমধ্যে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের হামলা যদি নিয়মিত ঘটে, তবে সীমান্ত বাণিজ্য, মানবিক চলাচল এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবে অতীতে পাকিস্তান দাবি করে এসেছে যে, তাদের সামরিক অভিযান মূলত সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকেই লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। তালেবান সরকারের অভিযোগ এসব বক্তব্যের বিপরীত চিত্র তুলে ধরে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ঘটনাস্থলে বর্তমানে তদন্ত চলছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। এ ধরনের হামলা সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করছে। আঞ্চলিক কূটনীতিতে এই ঘটনার প্রভাব কতটা পড়বে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।


