মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিযানে ১২৪ বিদেশি প্রবাসী আটক

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিযানে ১২৪ বিদেশি প্রবাসী আটক

প্রবাসী ডেস্ক

কুয়ালালামপুরের চৌকিট এলাকায় অবস্থিত জিএম প্লাজায় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ পরিচালিত বিশেষ অভিযানে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১২৪ জন বিদেশি প্রবাসীকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে সহায়তা করে মালয়েশিয়ার কোম্পানি কমিশন, ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুর সিটি হল।

অভিযান চলাকালে ভবনটির বিভিন্ন দোকান ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় বিদেশি নাগরিকদের যাচাই-বাছাই করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে বহু বিদেশি পালানোর চেষ্টা করেন। কেউ দোকানের ভেতরে লুকিয়ে পড়েন, কেউ গ্রাহক সেজে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, আবার অনেকে জরুরি সিঁড়ি ও লিফট ব্যবহার করে ভবন ত্যাগের চেষ্টা করেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারির কারণে তাদের অনেককেই ঘটনাস্থলেই আটক করা হয়।

অভিযানে পাকিস্তানি নাগরিক মুনির (৪৭) আটক হন। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলেও সেটির মেয়াদ গত বছরই শেষ হয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। এছাড়া মিয়ানমারের নাগরিক কামিদ (২২) কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাকেও আটক করা হয়। তিনি জানান, তিন মাস আগে এক এজেন্টকে অর্থ প্রদান করে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছেন এবং বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। তবে ঠিক কতজন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন সে তথ্য অভিযানের পরপরই নিশ্চিত করা যায়নি।

কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সাওপি ওয়ান ইউসুফ জানান, অভিযানে মোট ২০৫ জনকে তল্লাশি করা হয়, যার মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ১২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থান, ভ্রমণ নথির অনুপস্থিতি, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং ইমিগ্রেশন আইনের বিধান লঙ্ঘন। এসব অপরাধ মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন আইন ৬(১)(সি) ও ১৫(১)(সি) অনুযায়ী দণ্ডনীয়।

অভিযানের অংশ হিসেবে কুয়ালালামপুর সিটি হল ছয়টি কম্পাউন্ড ইস্যু করে এবং প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা ও বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের অভিযোগে একটি দোকান বন্ধের নোটিশ প্রদান করে। বৈধ নথি না থাকা বহু প্রবাসীর বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে তাদেরকে জালান দুতা এলাকায় অবস্থিত কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেখানে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।

মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শ্রমিকদের অবস্থান বৈধকরণ, ভিসা জটিলতা ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালনা হয়ে আসছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ শ্রমবাজারকে নিয়মতান্ত্রিক করার উদ্দেশ্যে অনিয়মে জড়িত শ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত তদারকি ও আইন প্রয়োগ জোরদার করছে। গত কয়েক বছরে শ্রমবাজারে ব্যাপক সংখ্যক বিদেশি কর্মীর উপস্থিতি এবং তাদের একটি অংশের অনিয়মিত অবস্থানের কারণে দেশটি বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়া সরকার অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখবে। এসব তদারকির ফলে অনিয়মিতভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের পাশাপাশি অবৈধভাবে নিয়োগদানে জড়িত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে। ফলে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি কর্মীদের জন্য বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত নীতি মেনে চলা আরও জরুরি হয়ে উঠছে।

অভিযানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বৈধতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হতে পারে। একই সঙ্গে যাদের নথিপত্র যাচাইয়ের পর বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের মুক্তি দেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দেশটির শ্রমনীতিতে বৈধ কাগজপত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ায় ভবিষ্যতেও এমন অভিযান চলমান থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রবাস