বিজবিডিনিউজ ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগের জটিলতা বিবেচনায় তাকে এখনও হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।
সোমবার রাতে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানান, খালেদা জিয়ার আগে তুলনায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন এবং চিকিৎসক দল তার অবস্থা পর্যবেক্ষণে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকছে।
গত রোববার রাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ড তাকে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় বোর্ডের আরেক সদস্য নিশ্চিত করেন যে তার নিউমোনিয়ার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা তার অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ জটিলতার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, বয়সজনিত দুর্বলতার কারণে সব চিকিৎসা একসঙ্গে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়; এতে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলে কোনো কোনো সূচক স্থিতিশীল থাকলেও কিছু প্রতিবেদন উদ্বেগের কারণ তৈরি করেছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, লিভারজনিত জটিলতা, হৃদ্রোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণে তাকে সমন্বিত চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নিউমোনিয়ার কারণে তার শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়েছিল, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বয়স এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ধীরগতিতে হলেও উন্নতির যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তা ইতিবাচক, তবে দ্রুত সুস্থতার সম্ভাবনা সীমিত। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, তাকে আগামী এক সপ্তাহের মতো হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। এ সময় তার কিডনি, লিভার, হৃদ্যন্ত্র এবং শ্বাসতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
চিকিৎসা সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসজনিত জটিলতা, কিডনি সমস্যা, হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এসব দীর্ঘস্থায়ী জটিল অবস্থার কারণে নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ তার জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসা দল জানিয়েছে, তার বয়স এবং শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিটি চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রয়োগ করতে হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অতিরিক্ত চাপ না সৃষ্টি হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণে তার শারীরিক সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এর প্রেক্ষিতে চিকিৎসা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে ধাপে ধাপে উন্নতির লক্ষ্যে। চিকিৎসকদের মতে, বর্তমান অবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং শ্বাসতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখা, যা নিউমোনিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিযুক্ত প্রতিটি বিশেষায়িত বিভাগ আলাদা করে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা হালনাগাদ করা হচ্ছে। তার দৈনন্দিন শারীরিক কার্যক্রমও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে যাতে কোনো আকস্মিক জটিলতা দেখা দিলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
চিকিৎসকদের মতে, আগামী কয়েকদিন তার স্বাস্থ্যপরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকবে। নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য জটিলতা কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার ওপরই নির্ভর করবে হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তবে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকদের মূল্যায়নে, ধীরে হলেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যে সামান্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে তা চিকিৎসা পরিকল্পনা অব্যাহত রাখার পক্ষে ইতিবাচক নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


