বিএনপির ৬৫ নেতার স্থগিতাদেশ ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

বিএনপির ৬৫ নেতার স্থগিতাদেশ ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

জাতীয় ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনগত শৃঙ্খলা জোরদার ও দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পূর্বের বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিভিন্ন সময় নিয়মভঙ্গ, সংগঠনের শৃঙ্খলা লঙ্ঘন বা অন্যান্য কারণে স্থগিত বা বহিষ্কৃত হওয়া ৬৫ নেতার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ প্রত্যাহার করে তাদের সক্রিয়ভাবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি জানায়, যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সংগঠনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তারা পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয় যে, সংশ্লিষ্ট নেতারা দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সংগঠনের কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতে তারা পুনরায় যুক্ত হবেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা এই তালিকায় রয়েছেন। কুষ্টিয়া, নরসিংদী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, রাজশাহী, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, বরগুনা, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, ফেনী, শেরপুর, খুলনা, ঝালকাঠি, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, সরাইল, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও দেবিদ্বারের মতো জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পুনর্বহাল হয়েছেন। দলীয় তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যাহার করা পদক্ষেপগুলোর মধ্যে স্থগিতাদেশ, বহিষ্কারাদেশসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত।

দলসূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক কাঠামো আরও কার্যকর ও সক্রিয় করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সামগ্রিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করে। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা কয়েকটি সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তি করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুনর্বহাল হওয়া নেতাদের প্রতি আশা ব্যক্ত করা হয়েছে যে, তারা দলীয় নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা মেনে ভবিষ্যতে সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যেকোনো রাজনৈতিক দলই অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক সংকট নিরসন ও শক্তি সংহত করার প্রতি গুরুত্ব দেয়। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নির্বাচনের সময় দলীয় শৃঙ্খলা ও সংগঠনের ঐক্য বজায় রাখা রাজনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখে। বিএনপির ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক স্থবিরতা ও দ্বন্দ্ব দলের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে আসছিল। এ ধরনের পদক্ষেপ স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় সংস্কার, নেতৃত্ব পুনর্বিন্যাস এবং সাংগঠনিক সমস্যার সমাধানে কাজ করে আসছে। অতীতে শৃঙ্খলাভঙ্গ, অভ্যন্তরীণ বিভাজন বা নির্দেশ অমান্যের মতো কারণে অনেক নেতাকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এবার তাদের পুনরায় দলে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত একটি বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করা।

তবে দলীয় সূত্র বলছে, শাস্তি প্রত্যাহার করা হলেও সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভবিষ্যৎ আচরণ নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে। তারা সংগঠনের নীতিমালা মেনে চলছেন কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া, কয়েকটি জেলায় বিরোধপূর্ণ অবস্থানের কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার যে অভিযোগ ছিল, পুনর্বহাল নেতারা সক্রিয় হলে পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের সমর্থক ও কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুনর্বহাল হওয়া নেতারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে, স্থগিতাদেশ ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তকে দল পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় ঐক্য জোরদার করা এবং সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাদের সক্রিয় করা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনীতি