জাতীয় ডেস্ক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এবং একটি সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পর্যবেক্ষকদের চোখের মাধ্যমে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সংস্থাগুলোর নিয়োগকৃত মাঠকর্মীরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বা প্রচারণায় যুক্ত হলে তা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে এক পরিচিতিমূলক সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, “জাতিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা এককভাবে সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতায় এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা আপনাদের চোখ দিয়েও এই নির্বাচন দেখতে চাই। কারণ পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা না থাকলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঠিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে না।”
তিনি আরও নির্দেশ দেন, যারা পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত হবেন, বিশেষত নতুনদের, তাদের অবিলম্বে নির্বাচনী ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সিইসি উল্লেখ করেন, মাঠকর্মীদের কর্মকাণ্ডই সংস্থার সুনাম এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করবে। পাশাপাশি, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম আইন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না—এসব বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের বাস্তব তথ্য অনুযায়ী রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।
সিইসি জানান, যদি কোনো ম্যানেজমেন্ট বা প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা থাকে, তবে পর্যবেক্ষকদের সুপারিশ ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংস্কার ও উন্নত করতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কেউ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতি সিইসি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তাদের রাজনৈতিক কোনো সংযোগ থাকলে বা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব হবে ‘টু অবজার্ভ, নট টু ইন্টারভেন’—অর্থাৎ শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ করা, হস্তক্ষেপ না করা। কোনো অনিয়ম দেখা দিলে তা বন্ধ করা তাদের কাজ নয়, বরং তা রিপোর্ট করাই প্রধান দায়িত্ব।
বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রতি খেয়াল রাখার বিষয়টি তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। সিইসি বলেন, যেহেতু পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশি, তাই দেশীয় প্রেক্ষাপটে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। বিদেশি পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে রিপোর্ট করা উচিত নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পর্যবেক্ষকরা এমনভাবে রিপোর্ট করবেন যা বাস্তবসম্মত, প্রয়োগযোগ্য এবং কার্যকর।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, সিসি ক্যামেরা ও সাংবাদিকরা কমিশনের চোখের মতো কাজ করবে। পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতায় একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় সিইসি নির্বাচনী স্বচ্ছতা, মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব ও দেশের বাস্তবতার প্রতি খেয়াল রাখার গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন, যা আগামী নির্বাচনের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।


