জাতীয় ডেস্ক
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে জারি করা রুলের শুনানি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) শেষ হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ এবং ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
এর আগে, ১৩ নভেম্বর, অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আশ্বস্ত করেন যে রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে হস্তান্তর করা হবে না। রিটকারীর পক্ষে আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তারা রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিদেশি সংস্থাকে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করছেন।
গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছিল যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চলমান চুক্তির প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলে আরও জানতে চেয়েছে, কোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) কেন নিশ্চিত করা হবে না।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষ থেকে রিটটি দায়ের করা হয়। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
রিটটি দায়েরের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে যুক্ত করা হয়। বিশেষ করে ‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি আলোচিত ছিল। রিটে নির্দেশনা চাওয়া হয় যে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হোক, যাতে স্বচ্ছতা ও আইনানুগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দরের মধ্যে একটি। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এর গুরুত্ব দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য অপরিসীম। টার্মিনালের পরিচালনার বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলে বন্দর ব্যবস্থাপনায় প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে রুলের মাধ্যমে টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আইনানুগ কিনা তা স্পষ্ট হবে, যা ভবিষ্যতে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে।
রিটের রায়ে আদালত যদি নির্দেশ দেয় যে দরপত্র প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তবে এটি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। এর ফলে টার্মিনালের পরিচালনা কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য হবে, যা দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যিক পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


