জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীতে আয়োজিত একটি জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় মুন্ডা সম্প্রদায়ের জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিত নীতি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ গুলশানে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল শেয়ারিং মিটিং: ফ্রম ইমপ্যাক্ট টু অ্যাকশন মেইনস্ট্রিমিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ফর দ্য মুন্ডা কমিউনিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুন্ডা সম্প্রদায় অন্যতম নাজুক অবস্থানে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতিনির্ভর জীবনধারা, সীমিত আর্থ-সামাজিক সক্ষমতা এবং পরিবর্তিত পরিবেশগত পরিস্থিতির কারণে এই জনগোষ্ঠী বহুমুখী ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব তাদের জীবন ও জীবিকায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে, যা মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বহু সময়ে মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রথাগত অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে এবং বন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে তাদের অভিগম্যতা নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি জানান, নীতি প্রণয়ন থেকে কার্যকর বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এই সম্প্রদায়ের প্রয়োজন, জীবনধারা এবং ঐতিহ্যগত অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। তিনি আরও বলেন, সব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব না হলেও টেকসই সমাধানের পথে যাত্রা শুরু করা এখন সময়ের দাবি।
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, জলবায়ু-সৃষ্ট ভঙ্গুরতা, পানির অভাব, ভূমি সংকট এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বর্তমানে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত পরিবর্তন তাদের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তুলছে। তিনি জানান, এসব সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন দপ্তর, উন্নয়ন সংস্থা ও স্থানীয় সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুন্ডা সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য নীতি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি পূর্বাভাস, দুর্যোগ প্রস্তুতি, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উন্নয়ন কর্মসূচি সম্প্রসারণ করলে এই জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মুন্ডা জনগোষ্ঠী পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ স্থানচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়ছে। তারা জানান, জীবিকা ও সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ায় সম্প্রদায়টি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। কৃষি, মৎস্য এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে, যা তাদের জলবায়ু সহনশীলতা আরও দুর্বল করে তুলছে। বক্তারা এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত পরিকল্পনা, গবেষণা এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, যিনি মুন্ডা জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, সম্প্রদায়টির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সম্পৃক্ত করে কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিরাও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কেবলমাত্র ত্রাণমূলক উদ্যোগ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন কৌশল, দক্ষতা উন্নয়ন, বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে মুন্ডা সম্প্রদায়সহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় তারা আরও সক্ষম হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন যে, সরকারি পর্যায়ের নীতি সহায়তা এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তারা আরও বলেন, এ ধরনের জাতীয় পর্যায়ের আলোচনাসভা ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নে কার্যকর পথনির্দেশনা দেবে।


