রাজধানী ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার মিত্র দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতা বেড়েছে। বিভিন্ন মিত্র দল এই নির্বাচনে মোট ১৬৮টি আসনে মনোনয়ন চেয়েছে। ইতিমধ্যেই নিজ নিজ দলীয় প্রার্থীদের তালিকা তারা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। তবে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরও আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোর জন্য কতটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা এখনও বিএনপি চূড়ান্ত করেনি। এ বিষয়টি স্থির না হওয়ায় মিত্র দলগুলো মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। এছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় বিএনপির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচির বাস্তবায়নও ঝুঁকিতে পড়েছে। মিত্র দলের নেতারা তফসিল ঘোষণার আগে আসন বণ্টন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় ইতিমধ্যেই ২৩৭ আসন অন্তর্ভুক্ত। তফসিল ঘোষণার আগে এসব আসনের বণ্টন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বিধা, প্রতীকের ব্যবহার, গণসংযোগ, শোডাউন এবং মাঠ পর্যায়ে লবিং-তদবিরের নানা বিষয় সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, জোটের পক্ষ থেকে মোট ২১টি আসনের তালিকা বিএনপির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বিএনপি বিষয়টি সুবিবেচনাসহ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। এটি আমাদের ও বিএনপির জন্যই মঙ্গলজনক হবে।”
মিত্র দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ইতিমধ্যেই হয়েছে। জোটগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত আসন ছাড়ের ঘোষণা চাওয়া হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
জোটের অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমাদের তালিকা বিএনপির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।”
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গণঅধিকার পরিষদ ২৫, গণফোরাম ১৬, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯, এলডিপি ১৩, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া ৬ দলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের বাকি পাঁচ দল ৪০টি, ১২ দলীয় জোট ২১, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) ৪, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, এনডিএম ১০, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫ এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছয়টি আসনে মনোনয়ন চেয়েছে।
জমি হওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবমিলিয়ে বিএনপির মিত্র দলগুলো মোট ১৬৮ জন প্রার্থী নিয়ে আসন বণ্টনের জন্য তালিকা জমা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরপিও সংশোধনের কারণে জোট করলেও দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে, যা কিছু আসনে জেতা কঠিন হতে পারে। অনেক আসনে দলের হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় এবং তৃণমূল পর্যায়ের সক্ষমতা যাচাই চলায় বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যারা দলীয় সবুজ সংকেত পেয়েছেন, তারা ছাড়াও বিএনপির নেতারা মাঠ পর্যায়ে প্রচার, গণসংযোগ ও লবিং-তদবিরে ব্যস্ত। এ ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে মিত্র দলগুলোও মাঠে কার্যক্রম শুরু করতে তৎপর হচ্ছে না, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব জানিয়েছেন, “আমরা বিএনপির কাছে আমাদের তালিকা দিয়েছি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা চলছে। বিএনপি কী সিদ্ধান্ত দেয়, তা দেখতে হবে।”
সর্বোপরি, আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় তফসিল ঘোষণার আগে মিত্র দলগুলো এবং বিএনপি উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় ও প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়ছে।


