মহাখালী কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ তারেক রহমানের

মহাখালী কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ তারেক রহমানের

 

রাজনীতি ডেস্ক

রাজধানীর মহাখালী কড়াইল বস্তিতে মঙ্গলবার রাতে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক বিবৃতিতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান এবং অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর কড়াইল বস্তিতে হঠাৎ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড দ্রুত বিস্তৃত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট। আগুনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে এবং ঘটনাস্থলের সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বস্তির কাঠামোগত দুর্বলতা, দাহ্য নির্মাণসামগ্রী এবং সরু গলির কারণে আগুন নেভানোর কাজে বাধা সৃষ্টি হয় বলে দমকল বাহিনী জানায়।

ঘটনার পর তারেক রহমান এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, কড়াইল বস্তি ও আশপাশের এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ফলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। তিনি বলেন, আগুনের উৎপত্তিস্থল, বিস্তার এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণমাত্রা সম্পর্কে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদন্ত প্রয়োজন। তারেক রহমান উল্লেখ করেন যে এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্থানীয়দের আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা আরও বাড়তে দেয়নি। তিনি মনে করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের দ্রুত অংশগ্রহণ ও সচেতনতা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়ক হয়ে থাকে, যা দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

কড়াইল বস্তি রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তম অনানুষ্ঠানিক আবাসন এলাকা, যেখানে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। বস্তি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক সংযোগ, দাহ্য উপকরণ দিয়ে নির্মিত ঘরবাড়ি, সরু পথ এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সুবিধার অভাবকে এসব ঘটনার অন্যতম কারণ বলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখ করে আসছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এলাকাটি একাধিক বড় অগ্নিকাণ্ডের মুখোমুখি হয়েছে, যার ফলে বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং সম্পদহানি ঘটেছে।

এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পর সাধারণত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়, খাদ্য সহায়তা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, কড়াইলসহ অনুরূপ বস্তি এলাকাগুলোতে পুনর্বাসন পরিকল্পনা, নিরাপত্তাবিধি বাস্তবায়ন, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম স্থাপন এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘমেয়াদে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি অব্যাহত থাকবে।

তারেক রহমান বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক ও মানবিক সহায়তার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি মনে করেন, অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্ত পরিবারগুলো দৈনন্দিন জীবনযাত্রা পুনর্গঠনে বিভিন্ন ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হবে, যা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর এবং মানবিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃতি ও ক্ষতির মাত্রা নিরূপণে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রাজধানীর বস্তি এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা জননিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নগরায়ণের চাপ, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর আবাসনসংকট এবং সীমিত স্থানজুড়ে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে ওঠায় এসব এলাকায় দুর্যোগের ঝুঁকি আরো বাড়ছে। অগ্নিকাণ্ডের পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমাতে স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের সমন্বিত পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

কড়াইলের এই অগ্নিকাণ্ড সাম্প্রতিক বছরগুলোর ধারাবাহিকতার আরেকটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কী পদক্ষেপ নেয়, সেটির দিকে এখন নজর থাকবে। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে।

রাজনীতি