আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ পদায়ন পরিকল্পনা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ পদায়ন পরিকল্পনা

জাতীয় ডেস্ক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ পদায়নে বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), অতিরিক্ত এসপি, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও থানা ওসি পদে পদায়নের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই পদায়ন প্রক্রিয়া পুলিশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের মাধ্যমে রাত ১২টা পর্যন্ত সার্বিক তালিকা তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকায় এমন কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও প্রভাবের কারণে প্রশাসনিক দায়িত্বে কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা পুলিশ সদর দফতের দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দিয়ে প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে লটারির মাধ্যমে পদায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফরের একাংশের পদক্ষেপ তাৎক্ষণিকভাবে লটারির প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপন তালিকা প্রণয়নের দিকে সরে গেছে। এতে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।

শুধু পদায়ন নয়, জেলা পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলি প্রক্রিয়ায়ও সাম্প্রতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপিপন্থি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে কমগুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া, সাবেক ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনারকে র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিরেক্টর পদে বদলি করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এমন কর্মকর্তাদের যারা জামায়াতে ইসলামীপন্থী বলে পরিচিত। অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন কম গুরুত্ব পাচ্ছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াতকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ওসিকে ক্লোজড করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ নির্বাচনকালীন পরিবেশ ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে।

পুলিশ প্রশাসনের অন্তর্গত কর্মকর্তাদের মতে, ডিএমপির ডিবি বিভাগের নির্যাতনের ঘটনা এবং একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তির মৃত্যুতে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি বা পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফরের কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, তবে তা কার্যকরভাবে কার্যক্রমে রূপ নেনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সবমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। পুলিশ যেন নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখে, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

পুলিশ প্রশাসনের এই পদায়ন ও বদলির প্রক্রিয়া আগামী নির্বাচনের কার্যক্রম, জন আস্থা এবং দেশের প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে পেশাদার ও নিরপেক্ষ পদায়ন নিশ্চিত করা না হলে এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ