দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি নিয়োগে অভিজ্ঞতার শর্ত কঠোর করল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি নিয়োগে অভিজ্ঞতার শর্ত কঠোর করল বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনীতি ডেস্ক

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত নীতিমালা পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এমডি পদে নিয়োগ পেতে হলে প্রার্থীকে পূর্বের তুলনায় অধিক সুস্পষ্ট ও কঠোর অভিজ্ঞতার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের জন্যও বাণিজ্যিক ব্যাংকে এমডি পদে নিয়োগের নতুন পথ খুলে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধান ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে এমডি নিয়োগসংক্রান্ত এই সংশোধিত নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো প্রার্থীকে এমডি বা সিইও পদে উপযুক্ত বিবেচনা করতে হলে তাকে অবশ্যই অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) বা উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে সম্মিলিত বা পৃথকভাবে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা আনুষ্ঠানিকভাবে বাধ্যতামূলক করা হলো, যা ব্যাংক পরিচালনায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এর আগে এমডি/সিইও পদে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ থাকলেও কোন পদে এই অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট ছিল না। সংশোধিত নির্দেশনা পূর্ববর্তী নীতির এই অস্পষ্টতা দূর করেছে। এখন থেকে শুধুমাত্র এএমডি বা ডিএমডি পদে অভিজ্ঞতাকেই প্রার্থীর যোগ্যতার মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হবে। ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ নেতৃত্বে দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই মানদণ্ডকে আরও নির্দিষ্ট ও কঠোর করা হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ রয়েছে।

নতুন নীতিমালায় এমডি নিয়োগে একটি অতিরিক্ত বিকল্প যোগ্যতার বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রথম শ্রেণির বা সমমানের উচ্চপদে কমপক্ষে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা এবং জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড-২ পদে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি পদে মনোনয়নের যোগ্য হবেন। এই বিধান কার্যকর হওয়ার ফলে আর্থিক খাতের নীতি নির্ধারণ ও তদারকি কার্যক্রমে দীর্ঘদিন কাজ করা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে আসীন হওয়ার পথ উন্মুক্ত হলো।

এ ধরনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা সাধারণত ব্যাংকিং নীতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ঋণ তদারকি, আর্থিক খাত সংস্কার প্রক্রিয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। ফলে তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকের নেতৃত্বে যুক্ত হওয়া ব্যাংক পরিচালনায় নীতি-সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সুদৃঢ় করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

সার্কুলারে আরও উল্লেখ করা হয়, পূর্ববর্তী নীতিমালায় ব্যাংকিং খাতের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে সব মিলিয়ে ২২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা ছিল, তবে তা পদভিত্তিকভাবে নির্দিষ্ট ছিল না। নতুন নির্দেশনা অভিজ্ঞতার ধরন ও স্তরকে স্পষ্ট করেছে, যাতে নেতৃত্ব পদের জন্য যোগ্যতা যাচাই আরও নির্ভুলভাবে করা যায়। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্বের মানোন্নয়নের পাশাপাশি এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সামঞ্জস্য নিশ্চিত হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালা দেশের ব্যাংকিং খাতে নেতৃত্ব নির্বাচন, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি, শীর্ষপদে অস্থিরতা ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দেওয়ায় নেতৃত্বের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা বেড়েছিল। সংশোধিত নির্দেশনা সেই আলোচনার প্রেক্ষাপটে নেতৃত্ব নির্বাচনের মানদণ্ড আরও শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নতুন সার্কুলার জারি হওয়ার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে ব্যাংক পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ