জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে সরকার দেশের ১৬৬টি উপজেলায় নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৬ নভেম্বর বুধবার একাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পদে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগের নির্দেশনা জারি করে। নতুন কর্মকর্তাদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের কাঠামোকে আরও সুসংগঠিত করার পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নতুন নিয়োগের বিষয়ে প্রকাশিত আটটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ইউএনও হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ জন্য তাদের ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর সেকশন ১৪৪-এর ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, যা জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেকশন ১৪৪ এর মাধ্যমে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়, যা নির্বাচনকালীন সময়ে মাঠ প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনওদের নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান বাধ্যতামূলক। নির্ধারিত সময়ে যোগদান না করলে ৩০ নভেম্বর বিকেল থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়েছে যে, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশাসনিক প্রস্তুতি যাতে কোনো অবস্থাতেই বিলম্বিত না হয়, সেদিকে সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে।
এছাড়া প্রজ্ঞাপনে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কোনো কর্মকর্তার কর্মস্থল এরই মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে তিনি তার বর্তমান দপ্তরের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে যোগদানপত্র দাখিল করতে পারবেন। এ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমে সম্ভাব্য বিভ্রান্তি বা বিলম্ব রোধ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব ও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা পালন করেন। ফলে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে এই পদে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও সক্রিয় ও সুশৃঙ্খল করতে সহায়ক হবে।
পূর্বে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়েও উল্লেখযোগ্য রদবদল আনা হয়েছিল। সাম্প্রতিক এই নিয়োগ ও রদবদল ধারাবাহিকভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনকে শক্তিশালী ও সমন্বিত রাখতে সরকার সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময়ে সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
ইউএনও পদে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ সাধারণত প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি নীতি বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। আসন্ন নির্বাচনের আগে এই নিয়োগ নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত প্রস্তুতিকে আরও সুসংগঠিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইউএনওদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা প্রদান নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষত বৃহত্তর জনসমাবেশ, নির্বাচনী প্রচারণা এবং সম্ভাব্য সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উপজেলা স্তরে নতুন কর্মকর্তাদের যোগদান সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যোগদানের পর তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনকালীন নির্দেশনা ও নীতিমালা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন।
নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব নতুন ইউএনও কর্তব্যভার গ্রহণের পর মাঠ প্রশাসনের কাঠামো আরও সুসংহত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।


