শাপলা কলি প্রতীকের স্কেচ চূড়ান্ত করল নির্বাচন কমিশন

শাপলা কলি প্রতীকের স্কেচ চূড়ান্ত করল নির্বাচন কমিশন

রাজনীতি ডেস্ক

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জন্য বরাদ্দ করা শাপলা কলি প্রতীকের স্কেচ চূড়ান্ত করেছে। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারে এই স্কেচই প্রতীকের চূড়ান্ত রূপ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতীকটির স্কেচ নির্ধারণ করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইসির স্কেচ চূড়ান্তের মাধ্যমে এনসিপির জন্য প্রতীক ব্যবহারের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। ইতোমধ্যে দলটির নাম নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তবে প্রতীকের ঘর দীর্ঘদিন খালি থাকার কারণে ব্যালট পেপার প্রস্তুতসহ কিছু প্রাথমিক কার্যক্রম অনিশ্চিত ছিল। স্কেচ যুক্ত হওয়ায় এখন দলটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পরবর্তী ধাপগুলো নির্বিঘ্নে এগিয়ে নিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসির ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকায় প্রতিটি দলের নামের পাশে নির্ধারিত প্রতীকের ছবি প্রদর্শিত হয়। সম্প্রতি এনসিপি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) নিবন্ধিত দল হিসেবে যুক্ত হওয়ায় তাদের নাম তালিকায় যুক্ত হলেও প্রতীকের ঘর খালি ছিল। বুধবার এনসিপির ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি পূরণ করা হলেও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এখনও অপেক্ষায় রয়েছে। দলটির নামের পাশে এখনো প্রতীকের স্কেচ যুক্ত হয়নি, ফলে তাদের প্রতীক ‘কাঁচি’ ব্যালট পেপারে কী রূপে প্রদর্শিত হবে, সে বিষয়ে ইসির আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনও বাকি।

এর আগে নির্বাচন কমিশন দুটি দল—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)—কে চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়। নিবন্ধনপ্রাপ্তির পর প্রতীক বরাদ্দ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় নাগরিক পার্টি পেয়েছে ‘শাপলা কলি’ এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) পেয়েছে ‘কাঁচি’ প্রতীক। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দ একটি বাধ্যতামূলক ধাপ হওয়ায় এই সিদ্ধান্তগুলোকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতীক কেবল বরাদ্দ করাই নয়, বরং প্রতীকের আনুষ্ঠানিক স্কেচ প্রস্তুত ও প্রকাশ করা কমিশনের দায়িত্ব। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতীকের অভিন্নতা নিশ্চিত করা, যাতে ভোটাররা ব্যালট পেপারে প্রতীক দেখে বিভ্রান্ত না হন। প্রতীকগুলোর গ্রাফিক স্কেচ সাধারণত সাদাকালো রূপে তৈরি করা হয় এবং নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ব্যালট পেপারে স্থান পায়। নতুন নিবন্ধিত দলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতীকের স্কেচ নির্ধারণ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কারণ এটি যাচাই-বাছাই, নকশা অনুমোদন এবং কমিশনের নথিভুক্তিকরণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন প্রদান এবং তাদের প্রতীক নির্ধারণ দেশের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করে। এনসিপি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)–এর ক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দ এবং স্কেচ চূড়ান্ত হওয়া নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে। বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতীক পাওয়া রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

একই সঙ্গে ভোটারদের জন্য প্রতীক সুস্পষ্টভাবে ব্যালট পেপারে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে একটি বড় অংশের ভোটার প্রতীক দেখে প্রার্থী ও দল চিহ্নিত করেন। তাই কমিশনের এই প্রক্রিয়া নির্বাচনী প্রয়োজনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এনসিপির ক্ষেত্রে স্কেচ নির্ধারণ শুরুর দিকে প্রক্রিয়াগত দিক থেকে কিছু বিলম্ব থাকলেও এখন তা সম্পন্ন হওয়ায় দলটি তাদের প্রচারণা কার্যক্রমে প্রতীকটি ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।

এদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী)–এর প্রতীকের স্কেচ এখনও প্রকাশ না হওয়ায় দলটি পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রতীকের স্কেচ অনুমোদিত না হলে তা ব্যালট পেপারে ব্যবহার করা যায় না। ফলে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে প্রতীক সংক্রান্ত প্রচারণা শুরু করতে কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতীক নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা না থাকলে ব্যালট পেপার প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ প্রক্রিয়াও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সম্পন্ন করা যায়। তাই প্রতীক এবং স্কেচ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রস্তুতির একটি অত্যাবশ্যক অংশ।

স্কেচ নির্ধারণের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির নির্বাচনী প্রতীক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহারযোগ্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি এই প্রতীক নিয়েই অংশগ্রহণ করবে এবং ব্যালট পেপারে শাপলা কলির নির্ধারিত স্কেচই প্রতীক হিসেবে মুদ্রিত হবে।

রাজনীতি