শিক্ষার মান উন্নয়নে বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের গুরুত্ব বেড়েছে

শিক্ষার মান উন্নয়নে বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের গুরুত্ব বেড়েছে

জাতীয় ডেস্ক

বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ও নির্মোহ মূল্যায়নের ওপর জোর দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী সময়ে পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর প্রদানের ভুল সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে ফেলেছিল। তিনি এ বিষয়টি শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে অভিহিত করেন।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবরার এসব তথ্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদগণ। সভায় শিক্ষা পরিবারের সদস্য, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষমতা এবং গণিতে সক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা রয়েছে। তিনি জানান, এই দুর্বলতাগুলোকে আরও বড় পরিসরে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং কার্যকর সমাধান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়।

অধ্যাপক আবরার উল্লেখ করেন, শিক্ষার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে উদ্বেগ বিদ্যমান, তা কাটাতে বাস্তবসম্মত এবং তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষকরা শিক্ষার মানের অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, এবং গ্রাসরুট পর্যায়ের চ্যালেঞ্জগুলো আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে। তিনি যুক্তি দেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য যে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতের নীতিমালার ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিরূপণে সরকার ইতোমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন কাঠামোর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অধ্যাপক আবরার জানান, সেকেন্ডারি ও প্রাথমিক শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে কোথায় অবস্থান করছে তা জানা হলে শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি চিহ্নিত করা সহজ হবে এবং প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, কোচিং, প্রাইভেট টিউশন এবং গাইড বইয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতার পেছনে যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে, সেটি আগে বোঝা প্রয়োজন। শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এই প্রথা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া, স্কুল ও কলেজের প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যা দূর করা বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়নের অন্যতম জরুরি কাজ।

শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সমন্বয় ভবিষ্যতে আরও কার্যকর হবে। তিনি বলেন, কসরুজ্জামান আহমেদের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন উদ্যোগ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। গবেষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকের মাধ্যমে আরও বিস্তারিত তথ্য আহরণ এবং সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করা হবে।

সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করা সব অংশগ্রহণকারীর অবদানকে গুরুত্ব দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সংগঠিত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণাভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার সম্ভব হবে, যা দেশের শিক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ