শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পূর্বাচল প্লট বরাদ্দ মামলার রায় আজ

শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পূর্বাচল প্লট বরাদ্দ মামলার রায় আজ

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে করা তিনটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার রায়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তিন মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

দুদকের দায়ের করা এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই পলাতক বলে জানা গেছে, ফলে তাদের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গত রবিবার তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। আদালত সেদিনই রায়ের জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন।

মামলার বিষয়ে দুদক জানায়, তদন্তে পাওয়া বিভিন্ন নথিতে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে প্লট বরাদ্দে আইন, বিধি ও নীতিমালা অনুসরণ না করে ক্ষমতার প্রভাব খাটানো হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা সরকারি পদে থেকে সুযোগ গ্রহণ করে অযোগ্যতা সত্ত্বেও ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজউকের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ প্রদানে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলাগুলোর প্রতিটি অভিযোগ দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি দমন আইনের বিভিন্ন ধারায় প্রমাণিত হয়েছে বলে তারা আদালতে যুক্তি প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশন দাবি করেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্থির থাকায় সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের জন্য তারা আবেদন করেছেন। অন্যদিকে একমাত্র হাজিরা দেওয়া আসামি খুরশীদ আলমের পক্ষে তার আইনজীবী জানান, দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি খালাস পাওয়ার যোগ্য।

মামলার অগ্রগতি অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে দুদক মোট ছয়টি মামলা দায়ের করে, যার মধ্যে আজ রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে তিন মামলার। প্রথম মামলাটি দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন ১৪ জানুয়ারি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ এ মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য এবং প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে প্রাথমিকভাবে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে আরও দুইজনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, একই প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত প্রভাব খাটিয়ে প্লট বরাদ্দের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

তৃতীয় মামলাটি এস এম রাশেদুল হাসান ১৪ জানুয়ারি দায়ের করেন, যেখানে মূল আসামি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অযোগ্যতা সত্ত্বেও তার নামেও প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং এই প্রক্রিয়া পরিচালনায় বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজউক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ভূমিকা পালন করেন। তদন্তের ভিত্তিতে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

প্রতিটি মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটসমূহ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। তবে আসামিদের প্রভাবের কারণে নির্ধারিত যোগ্যতা, অগ্রাধিকার ও প্রক্রিয়াগত বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা নথিপত্র, সাক্ষ্য ও দাপ্তরিক রেকর্ড পর্যালোচনা করে অনিয়মের প্রমাণ সংগ্রহ করেন।

রায় ঘোষণার মাধ্যমে এই তিন মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে। আদালতের রায় দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বড় ধরনের বার্তা দিতে পারে বলে আইনসংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন। রায়ের পরবর্তী ধাপ অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্ত হলে আসামিদের কারাদণ্ড ও অন্যান্য দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে এবং খালাসপ্রাপ্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মিলবে।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ