খালেদা জিয়ার নিউমোনিয়া শনাক্ত, নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চলছে

খালেদা জিয়ার নিউমোনিয়া শনাক্ত, নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চলছে

জাতীয় ডেস্ক

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণজনিত জটিলতা বাড়ায় তার শরীরে নিউমোনিয়া শনাক্ত করা হয়েছে। শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন এবং অবস্থার পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমলেও ফুসফুসের সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

গত রবিবার রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা ফুসফুসে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরবর্তী পর্যবেক্ষণে নিউমোনিয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জোরদার করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানান, তার বয়স, দীর্ঘদিনের নানা শারীরিক জটিলতা এবং পূর্ববর্তী রোগব্যাধি বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা জানান, খালেদা জিয়ার হৃদ্‌যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত একাধিক পুরোনো জটিলতা রয়েছে। এসব কারণে যেকোনো সংক্রমণ তার জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিউমোনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও শ্বাসতন্ত্রের কার্যকারিতা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক, শ্বাসসহায়ক থেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করছেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিকল্পনা পরিবর্তন করছেন।

মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বুধবার জানান, রোগীর সার্বিক অবস্থার উন্নতি ও অবনতির সম্ভাব্য দিকগুলো বিবেচনায় তাকে কেবিনেই নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিউমোনিয়া ধীরে ধীরে সেরে ওঠার বিষয় হওয়ায় কয়েকদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা তার শ্বাসকষ্টের প্রবণতা, অক্সিজেন স্যাচুরেশন, সংক্রমণের মাত্রা এবং অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারিতা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

মেডিকেল বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স্ক ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–পরিকল্পনা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সহায়ক থেরাপি দেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

এদিকে তার দ্রুত সুস্থতা কামনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একজন নেত্রী হিসেবে তার অসুস্থতা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। সংগঠনের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন পৃথকভাবে দোয়ার আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচিতে তার স্বাস্থ্যের দ্রুত উন্নতি এবং শারীরিক স্থিতিশীলতা কামনা করা হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে খালেদা জিয়া বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। হৃদ্‌রোগ, লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও কিডনি–সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তাকে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি চলতি বছর জানুয়ারিতে লন্ডনে যান এবং চার মাসের বেশি সময় সেখানে চিকিৎসা নেন। গত মে মাসে দেশে ফেরার পর থেকে শারীরিক জটিলতা পুনরায় বাড়তে থাকে এবং তাকে কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা–ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। যেহেতু তার একাধিক পুরোনো রোগ রয়েছে, তাই সংক্রমণ বা শ্বাসতন্ত্র–সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলে তা দ্রুত গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এই কারণে নিউমোনিয়া সেরে ওঠার পরও তাকে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসকদের ধারণা, নিউমোনিয়ার পুরোপুরি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনের পরিবর্তন সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণে একটি স্থায়ী চিকিৎসা–পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হতে পারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসা–সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত মেডিকেল বোর্ডের সম্মিলিত আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের বিশেষায়িত সহায়তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নিউমোনিয়া সেরে ওঠার পর খালেদা জিয়ার অন্যান্য জটিলতার ওপরও চিকিৎসকেরা বিশেষ নজর দেবেন। তার লিভার ও কিডনি–সংক্রান্ত পুরোনো সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালানো হবে। পুরো চিকিৎসা–ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে পরিচালিত হলে দীর্ঘমেয়াদে তার শারীরিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সম্ভাবনা বাড়বে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ