হাসিনার তিনটি লকার থেকে উদ্ধার ৯ কেজির বেশি স্বর্ণালঙ্কার

হাসিনার তিনটি লকার থেকে উদ্ধার ৯ কেজির বেশি স্বর্ণালঙ্কার

জাতীয় ডেস্ক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী পুনরায় যাচাইয়ের অংশ হিসেবে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে থাকা দুটি ব্যাংকের তিনটি লকার খুলে ৯ কেজি ৭০৭ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত এ অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের স্বর্ণালঙ্কার সংগ্রহ করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বুধবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কারের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকদের জিম্মায় মালামাল হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক চিরকুট ও লকারভুক্ত বর্ণনা পর্যালোচনায় ধারণা করা হচ্ছে, এসব স্বর্ণালঙ্কার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের হতে পারে। তবে দুদক মালিকানা সুনির্দিষ্টকরণের আগে কোনো প্রকার সিদ্ধান্তে যেতে চায় না বলে জানিয়েছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কমিশনের উপ-পরিচালক (বিশেষ অনু. ও তদন্ত-১) মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একটি অনুসন্ধান দল ২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে লকার খোলার অনুমতির আবেদন করে। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখার একজন স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন কর গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মনোনীত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার খোলার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতেও বলা হয়।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার পূবালী ব্যাংক পিএলসির মতিঝিল করপোরেট শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির প্রিন্সিপাল শাখায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পূবালী ব্যাংকের লকার নম্বর ১২৮, যা শেখ হাসিনার নামে খোলা, সেটিতে পাওয়া যায় একটি খালি পাটের ব্যাগ। দুদকের কর্মকর্তারা ব্যাগটি জব্দ করলেও এর মধ্যে কোনো ধরনের স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রী পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে থাকা লকার নম্বর ৭৫১/বড়/১৯৬ থেকে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৯২৩ দশমিক ৬০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার। একই ব্যাংকের লকার নম্বর ৭৫৩/বড়/২০০, যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিকীর নামে খোলা, সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫৬ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হার, বালা, কানের দুল, আংটি ও অন্যান্য অলঙ্কার রয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে। তবে এসব অলঙ্কারের সুনির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে বুলিয়ন বিশেষজ্ঞ ও স্বর্ণকারদের সহায়তায় আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের পরই মালিকানা নির্ধারণ, সম্ভাব্য বেআইনি সম্পদ অর্জন বা গোপন সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনগত দায়-দায়িত্ব মূল্যায়ন করবে দুদক।

দুদক আরও জানিয়েছে, লকারভুক্ত বর্ণনা ও সংযুক্ত চিরকুটে সম্ভাব্য মালিকানার বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র এসব তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। তদন্ত দল লকার খোলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব নথি, লকার খোলার সময় উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন, ব্যাংক লেনদেন বিবরণী এবং সম্পদ বিবরণীর তথ্য মিলিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এ ধরনের উদ্ধার সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পদ যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মালিকানা নিশ্চিত হলে সম্পদ বিবরণী গোপন, সম্পদের উৎস অসঙ্গতি বা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মতো অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দিতে দুদক এখনো অপেক্ষা করছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর দুদক স্বর্ণালঙ্কারের সঠিক মূল্যায়ন, মালিকানা নির্ধারণ এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকৃত সম্পদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া হবে না।

রাজনীতি