জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনী আয়োজনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ রাখার লক্ষ্যে এ ধরনের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক আয়োজনকে নির্বাচন কমিশন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক বুধবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশন বিস্তারিত আলোচনা করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
সভায় অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে পুলিশ, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র, পরিবহন-লজিস্টিকসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতি বিষয়ে মতামত তুলে ধরবেন। এসব তথ্য কমিশনের পরবর্তী পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা প্রণয়নে সহায়তা করবে।
নির্বাচনপূর্ব সময়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা নির্বাচন কমিশনের প্রধান অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্য সামনে রেখে কমিশন প্রতিটি ধাপে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে প্রস্তুতিমূলক সভা করছে। বিগত জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে এবারও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতকরণ, অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মাঠপর্যায়ের মনিটরিং জোরদারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনকালীন আচরণবিধি বাস্তবায়ন, প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ব্যালট সামগ্রী পরিবহন ও সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। আজকের সভায় এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন-সম্ভাব্যতা, প্রয়োজনীয় সমন্বয় এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের নিজস্ব প্রস্তুতি, সংকট মোকাবিলা সক্ষমতা এবং দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
বিশেষ করে ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে প্রবেশ, কেন্দ্রের ভেতর শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কেন্দ্রে নিরাপত্তা বলয় তৈরি, সহিংসতা রোধ এবং ভোট গ্রহণ শেষে নিরাপদে ফলাফল প্রেরণ—এসব প্রসঙ্গ আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
নির্বাচনকালীন পরিবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেই লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর নির্বাচন কমিশন জোর দিচ্ছে। কমিশন মনে করে, যথাসময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলা সহজ হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য রাখা সম্ভব হবে।
আজকের সভা শেষে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে পারে, যা মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও সহায়তা করবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় কমিশনের এসব পদক্ষেপ নির্বাচন প্রস্তুতিকে আরও সুসংগঠিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


