সাঁজোয়া কোরের সদস্যদের সক্ষমতা উন্নয়নে আধুনিক প্রশিক্ষণের ওপর সেনাপ্রধানের গুরুত্বারোপ

সাঁজোয়া কোরের সদস্যদের সক্ষমতা উন্নয়নে আধুনিক প্রশিক্ষণের ওপর সেনাপ্রধানের গুরুত্বারোপ

জাতীয় ডেস্ক

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাঁজোয়া কোরের সদস্যদের আধুনিক, সময়োপযোগী ও কৌশলগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত সক্ষমতা বাড়িয়ে বর্তমান বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর পরিবর্তনশীল ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাঁজোয়া কোরের প্রতিটি সদস্যকে দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও আধুনিক সামরিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জটিল পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বগুড়া সেনানিবাসের আর্মার্ড কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে অনুষ্ঠিত সাঁজোয়া কোরের বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এ আহ্বান জানান। এ সম্মেলনে সাঁজোয়া কোরের বিভিন্ন ইউনিটের অধিনায়ক ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেনাপ্রধান বলেন, আধুনিক যুদ্ধের কৌশল, প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্মপরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি সদস্যকে সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হতে হবে।

সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশে তিনি সাঁজোয়া কোরের দীর্ঘ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও দেশের প্রতিরক্ষায় এ কোরের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাঁজোয়া কোর দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন, প্রশিক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়ন এবং কৌশলগত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এ কোরকে ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী আরও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সম্মেলনে সেনাপ্রধান সাঁজোয়া কোরের কার্যক্রম আরও গতিশীল, দক্ষ ও কার্যকর করার বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর বিস্তারিত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বিশেষভাবে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি, সিমুলেশনভিত্তিক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ, অপারেশনাল প্রস্তুতি জোরদার এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ নীতিমালা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মতে, আধুনিক সামরিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সাঁজোয়া কোরকে অধিক প্রযুক্তিনির্ভর, তথ্যভিত্তিক ও দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে জানানো তথ্য অনুযায়ী, সম্মেলনে সেনাপ্রধানকে স্বাগত জানান আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, সাঁজোয়া কোরের কর্নেল কমান্ড্যান্ট, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, বগুড়া এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার এবং আর্মার্ড কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের কমান্ড্যান্ট। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সাঁজোয়া কোরের বিভিন্ন ইউনিটের কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তার নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন, যার মধ্যে ছিলেন ডিজি এনএসআই, অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের কর্মকর্তারা, সাঁজোয়া ব্রিগেডের কর্মকর্তারা এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাঁজোয়া ইউনিটের অধিনায়কেরা। তাদের অংশগ্রহণে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অভিজ্ঞতা, কৌশলগত ধারণা ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সমন্বয় আরও সুদৃঢ় হয় বলে উল্লেখ করা হয়।

সেনাপ্রধান সম্মেলনে বলেন, বিশ্বব্যাপী সামরিক প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রকে আগের তুলনায় অনেক বেশি জটিল করে তুলবে। তাই সাঁজোয়া কোরকে কেবল প্রচলিত সামরিক দক্ষতায় সীমাবদ্ধ না থেকে উন্নত প্রযুক্তি, ড্রোন প্রতিরক্ষা, সাইবার সক্ষমতা এবং একীভূত যুদ্ধ কৌশলের বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি প্রত্যাশা করেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন এবং আধুনিক কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাঁজোয়া কোর দেশের প্রতিরক্ষা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা সাঁজোয়া কোরের চলমান কর্মকাণ্ড, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় প্রশিক্ষণ অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক যান ও সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা আরও কার্যকর করা, প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়। পাশাপাশি কোরের সদস্যদের পেশাগত উন্নয়ন ও কল্যাণ কার্যক্রম শক্তিশালী করার ওপরও আলোচনা হয়।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য ও সম্মেলনের আলোচিত বিষয়গুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, সাঁজোয়া কোরকে ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী আরও সক্ষম ও প্রযুক্তিনির্ভর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের বার্ষিক সম্মেলন কোরের কার্যক্রম মূল্যায়ন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সামগ্রিক প্রস্তুতি আরও সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ