জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে টানা তৃতীয়বার ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচিত

জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে টানা তৃতীয়বার ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচিত

রাজনীতি ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০২৬–২০২৮ কার্যকালের জন্য দলের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানকে টানা তৃতীয়বারের মতো আমির নির্বাচিত করেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে নির্বাচিত আমির হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল প্রকাশিত দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন কার্যকাল শুরুর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে শপথ নেবেন তিনি। এর মাধ্যমে ২০২৬–২০২৮ সময়কালের জন্য তার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

জামায়াতে ইসলামী জানায়, গঠনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিলের রুকন সদস্যরা সরাসরি গোপন ভোটের মাধ্যমে এক জন আমির নির্বাচন করেন এবং তিন বছরের জন্য নির্বাচিত আমির আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই গত অক্টোবর মাসে সারা দেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম ১ নভেম্বর রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। তার বরাতে জানানো হয়, গত ৯ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রুকনদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গোপন ব্যালটে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ডা. শফিকুর রহমান আবারও আমির নির্বাচিত হন।

দলের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে আমির নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা এর আগে মাত্র দুইবার ঘটেছে। অধ্যাপক গোলাম আযম এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এই পদে তিন মেয়াদ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাদের পর ডা. শফিকুর রহমান এই অবস্থানে পৌঁছানো তৃতীয় ব্যক্তি।

ডা. শফিকুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবন, পেশাগত পরিচিতি এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততারও দীর্ঘ পটভূমি রয়েছে। তিনি ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ (বর্তমান এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চিকিৎসা পেশায় যুক্ত থাকলেও তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছাত্রজীবন থেকেই শুরু।

শুরুতে তিনি জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দিয়ে সংগঠনের সিলেট মেডিক্যাল কলেজ শাখা এবং সিলেট শহর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। যোগদানের পর তিনি পর্যায়ক্রমে সিলেট শহর, জেলা ও মহানগর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব অভিজ্ঞতা তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যায়ে উঠতে সহায়তা করে।

২০১৬ সালে তিনি দলটির সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর প্রথমবার ও ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয়বার আমির নির্বাচিত হন। দায়িত্বকালে তিনি সাংগঠনিক পুনর্গঠন, বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্বিন্যাস এবং কেন্দ্র থেকে基层 পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার কাজে যুক্ত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্র অনুসারে আমির নির্বাচন দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী কাঠামো গঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমির হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা, কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে দলের নীতি, দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করতে হয়। এ কারণে কাউন্সিলরদের ভোটে টানা তিনবার নির্বাচিত হওয়া নেতৃত্বের প্রতি দলীয় রুকনদের আস্থার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নতুন কার্যকাল শুরু হওয়ায় দলের নীতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন বা পুনর্বিন্যাস আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভবিষ্যৎ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটির অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন কার্যকালে আমিরের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত সূচি অনুসারে, শপথ গ্রহণের পর নতুন কেন্দ্রীয় দায়িত্ব বণ্টন, বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটে সাংগঠনিক নির্দেশনা জারি এবং নতুন কার্যপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলের সাংগঠনিক পরিমণ্ডলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আজকের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৬–২০২৮ সময়কালের জন্য দলটির নতুন নেতৃত্ব কাঠামো আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।

রাজনীতি