গুগলে কনটেন্ট অপসারণে সরকারি অনুরোধ বেড়েছে

গুগলে কনটেন্ট অপসারণে সরকারি অনুরোধ বেড়েছে

জাতীয় ডেস্ক

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কাছে মোট ২৭৯টি কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গুগলের স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে জানা যায়, এসব অনুরোধের অধিকাংশই সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরানোর দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত, যদিও অনুরোধগুলোর প্রতি প্ল্যাটফর্মের সাড়া তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল।

গুগল (অ্যালফাবেট) সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৫ সালের প্রথমার্ধের বৈশ্বিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধগুলো পর্যালোচনা করেছে। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অনুরোধের সংখ্যা, আইনি বা নীতিগত পদক্ষেপ, কনটেন্ট যাচাই এবং চূড়ান্ত ব্যবস্থাগুলো এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মোট ২৭৯টি অনুরোধ পাঠিয়েছে, যার অধীনে আইটেমের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৩টি। গত বছরের একই সময়ে অনুরোধের সংখ্যা ছিল ৩৩৭টি এবং আইটেমের সংখ্যা চার হাজার ৪৭০। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুরোধের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও কনটেন্ট অপসারণ ইস্যুটি উল্লেখযোগ্য রূপেই রয়ে গেছে।

গুগলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে পাঠানো অনুরোধের মধ্যে সর্বাধিক ছিল সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট অপসারণের আবেদন। এ ধরনের অনুরোধের সংখ্যা ১৮১টি, যা মোট অনুরোধের বেশিরভাগ। এছাড়া ৩৮টি নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবা সম্পর্কিত এবং ৩২টি মানহানির অভিযোগভিত্তিক অনুরোধ ছিল। সরকারের সমালোচনা সম্পর্কিত সব অনুরোধই ইউটিউব প্ল্যাটফর্মকে লক্ষ্য করে পাঠানো হয়। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

গুগলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আইটেমগুলোর ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করা হয়নি, ফলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ১৬ দশমিক ১ শতাংশ অনুরোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, ৯ শতাংশ কনটেন্ট আগেই অকার্যকর ছিল। আইনি প্রক্রিয়ায় সরানো হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কনটেন্ট, নীতিভিত্তিক কারণে সরানো হয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কনটেন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্বচ্ছতা প্রতিবেদনের বাইরে ইউটিউবও নিয়মিতভাবে তাদের কনটেন্ট অপসারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫৫টি ভিডিও সরিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। এগুলোর বেশিরভাগই কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গের কারণে অপসারণ করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বের সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশে নতুনভাবে উল্লেখ করা হয় যে, বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কনটেন্ট ব্লক করার অনুরোধ জানাতে পারবে। আগের আইনে এ বিধান থাকলেও নতুন অধ্যাদেশে যোগ হয়েছে—স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্লক করা কনটেন্টের তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে। এর ফলে সরকারি সংস্থাগুলোর কনটেন্ট অপসারণ অনুরোধ সম্পর্কে জনসাধারণ আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো মনে করে, কনটেন্ট অপসারণ নীতিমালা আরও স্বচ্ছ হওয়ার ফলে সাধারণ নাগরিক বুঝতে পারবেন কোন ধরনের সামগ্রীকে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার গুগলে পাঠানো নির্দিষ্ট কনটেন্ট অপসারণ অনুরোধের তালিকা প্রকাশ করেনি। ফলে কোন বিষয়বস্তুকে কেন সরানোর অনুরোধ জানানো হচ্ছে—এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি সংস্থার কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ বৃদ্ধির প্রবণতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এনেছে। ভবিষ্যতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের আওতায় কনটেন্ট অপসারণের নীতি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং সরকারি সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা কতটা বাড়ানো হবে—তা ডিজিটাল পরিবেশে নাগরিক অধিকার ও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গুগলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রদত্ত পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে যে, কনটেন্ট অপসারণ অনুরোধের সংখ্যা কমলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংবেদনশীল কনটেন্ট এখনও নজরদারির আওতায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কাঠামো এবং সরকারের স্বচ্ছতা প্রদর্শন নীতিগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়ে নানা মহলে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ