জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বাউলদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত ‘গানের আর্তনাদ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি এবং সংঘর্ষের ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে জুলাই মঞ্চের নেতাকর্মীরা এসে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতি ঘটে। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও বাউল ও আয়োজকরা বাধা উপেক্ষা করে সন্ধ্যায় নির্ধারিত অনুষ্ঠান চালিয়ে যান।
শাহবাগ মোড়ে বিকেলে ‘সম্প্রীতির যাত্রা’ নামের সংগঠনটি এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজকদের দাবি ছিল—সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া বাউল শিল্পী আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সারা দেশে বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানানো। অনুষ্ঠান শুরুতে বাউল শিল্পীরা বিভিন্ন আঞ্চলিক ও লোকসংগীত পরিবেশন করেন এবং আয়োজকরা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, অনুষ্ঠান চলাকালে জুলাই মঞ্চের কয়েকজন কর্মী একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগে পৌঁছান। তারা শুরুতে মিছিলসহকারে অনুষ্ঠানস্থলের সামনের অংশে অবস্থান নেন এবং আয়োজকদের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রশ্ন ও আপত্তি তোলেন। পরে তাদের কয়েকজন আয়োজকদের স্থাপিত ব্যানার সরানোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এতে বাউল শিল্পী ও আয়োজকদের সঙ্গে জুলাই মঞ্চের কর্মীদের তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আশপাশে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও নগর পুলিশের কয়েকজন সদস্য এগিয়ে আসেন।
ঘটনার সময় উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর বাধা সৃষ্টি ও উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তোলে। উপস্থিত বাউল শিল্পী ও আয়োজকরা দাবি করেন, সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ করতে চাইলেও জুলাই মঞ্চের কর্মীরা অনুষ্ঠান ব্যাহত করার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে জুলাই মঞ্চের কর্মীরা অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠানস্থলে তাদের উপস্থিতি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আয়োজকরা প্রতিক্রিয়া দেখান।
উত্তেজনা তৈরি হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর আয়োজকরা ঘোষণা দেন যে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকবে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বাউল শিল্পীরা আবার মঞ্চে উঠে পরিবেশনা শুরু করেন। তারা লোকসংগীত ও প্রথাগত বাউল গান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। উপস্থিত দর্শক ও সমর্থকরাও অনুষ্ঠান স্থলে অবস্থান করে শিল্পীদের উৎসাহ দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাউল শিল্পীদের ওপর হামলা ও হয়রানির অভিযোগ ওঠায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ‘গানের আর্তনাদ’ অনুষ্ঠানের আয়োজনকে আয়োজকরা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ও মত প্রকাশের একটি অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তারা জানান, বাউল শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার বাহক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের ওপর হামলা কিংবা গ্রেপ্তার সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
শাহবাগ মোড়ে এ ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ অতীতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে সচেতনতা সৃষ্টি করা। তবে এবারের অনুষ্ঠানে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে থাকা কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত।
ঘটনার পর শাহবাগ এলাকায় সাময়িকভাবে ভিড় বাড়লেও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। রাত হওয়ার আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয় এবং বাউল শিল্পীরা পরবর্তী কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনাটি নিয়ে এখনো কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা জিডি করেনি। তবে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মনে করা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আয়োজকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।


