অনলাইন ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে আটক হওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে ১৮৮ জন দেশে ফিরে এসেছেন। দেশটির কারাগারে বন্দি থাকা অবশিষ্ট ২৪ জনও অচিরেই মুক্তি পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি প্রবাসীদের মুক্তি ও দেশে ফেরার অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলমান প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখেছে। ইউএই–তে বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া অবশিষ্ট প্রবাসীদের মুক্তির বিষয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে এবং শিগগিরই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আমিরাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশিদের আটক করা হয়। প্রথম দফায় আটক ৫৭ জনের মধ্যে আদালত তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে দশ বছর এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করে। গত বছরের ২৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের সাজা মওকুফের জন্য অনুরোধ জানান। এ উদ্যোগ ইতিবাচক ফল দেয় এবং প্রবাসীরা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে দেশে ফিরতে শুরু করেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ধাপে ধাপে আটক প্রবাসীদের মুক্তি নিশ্চিত করা হয়। এর অংশ হিসেবে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম পর্যায়ে ১৮৮ জনকে মুক্তি দিয়ে দেশে পাঠানো হয়। তখনই জানানো হয়, অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির বিষয়েও প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক ঘোষণায় অবশিষ্ট ২৪ জনের মুক্তি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে দেশে ফেরা ১৮৬ জন কর্মীকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে আর্থিক অনুদান, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আমিরাতে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক দিককেই তুলে ধরেনি, বরং বিদেশে কর্মরত নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের নানা উদ্যোগের সফলতাও প্রতিফলিত করেছে। সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আমিরাতে আটক থাকা সব বাংলাদেশি প্রবাসীই মুক্তি পাবেন এবং দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আগামী দিনগুলোতে সমন্বিতভাবে কাজ চালিয়ে যাবে। অবশিষ্ট ২৪ জন দেশে ফিরলে পুনর্বাসন কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।


