বিশ্ব ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাষ্ট্রনেতারা

বিশ্ব ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাষ্ট্রনেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিবিসি নিউজ বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—গত বছর জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত्थানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রায়ের পর তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না—এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক চলছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এখানেই কি শেষ হয়ে গেল একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যায়?

যুগে যুগে এমন অনিশ্চিত ও নাটকীয় পরিণতির মুখোমুখি হয়েছেন বহু শক্তিধর রাষ্ট্রনেতা। কারও মৃত্যুদণ্ড খুব দ্রুত কার্যকর হয়েছে, কেউ পলাতক থেকেও ইতিহাসে প্রভাব রেখে গেছেন, আবার কেউ শুনেছেন মৃত্যুদণ্ডের রায়, কিন্তু পরবর্তীতে নায়ক হয়েই ফিরে এসেছেন রাজনীতির মঞ্চে।

এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ইতিহাসের কিছু আলোচিত রাষ্ট্রনেতা—যাদের রাজনৈতিক উত্থান যেমন নাটকীয়, পতনও তেমনি ঝড়ো।

ইংল্যান্ডের প্রথম চার্লস — ‘রাজাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়’

ইউরোপে প্রথমবারের মতো কোনো রাজাকে তার নিজের জনগণ মৃত্যুদণ্ড দেয় ১৬৪৯ সালে। সংসদ ভেঙে ব্যক্তিগত শাসন, কর আরোপ এবং ধর্মীয় সংস্কার—এগুলোই তার পতনের মূল কারণ হিসেবে ইতিহাসে উল্লেখিত।
মৃত্যুদণ্ডের পর ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফ্রান্সের লুই ষোড়শ — বিপ্লবের রক্তাক্ত অধ্যায়

ফরাসি বিপ্লবের সময় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১৭৯৩ সালে লুই ষোড়শকে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়েই ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন চূড়ান্ত হয়।
পরে “রেইন অব টেরর” নামে পরিচিত ভয়াবহ দমন-পীড়নের সময় শুরু হয়, যা থেকে পরবর্তীতে উঠে আসেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।

মেরি অ্যান্টোইনেট — বিলাসিতার প্রতীক থেকে গিলোটিনে

ফরাসিদের ক্ষোভের কেন্দ্রে থাকা মেরি অ্যান্টোইনেটও বিপ্লবী ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৭৯৩ সালের অক্টোবরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে তার জীবন শেষ হয়।

মেক্সিকোর সম্রাট ম্যাক্সিমিলিয়ান — বিদেশি শাসনের পতন

নেপোলিয়ন তৃতীয়ের সমর্থনে সিংহাসনে বসা ম্যাক্সিমিলিয়ান ফরাসি বাহিনী প্রত্যাহারের পর পরাজিত হন। ১৮৬৭ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এ ঘটনাই মেক্সিকোতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে শক্তিশালী করে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট — রায়ে মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু পরিণতি নির্বাসন

১৮১৬ সালে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও তা কার্যকর হয়নি। ওয়াটারলুর পরাজয়ের পর সেন্ট হেলেনায় নির্বাসনেই তার জীবনের ইতি ঘটে।

সান ইয়াত-সেন — মৃত্যুদণ্ড থেকে রাষ্ট্রগঠনের নেতৃত্বে

১৮৯৫ সালের বিদ্রোহের পর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেলেও তিনি পালিয়ে বিপ্লবী আন্দোলন চালিয়ে যান।
অবশেষে ১৯১১ সালে কিং সাম্রাজ্য পতনের পর চীন প্রজাতন্ত্রের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন।

ইয়াসির আরাফাত — মৃত্যুদণ্ডের রায় পেরিয়ে নোবেল জয়

জর্ডানের সঙ্গে সংঘাতের সময় অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড শুনলেও নির্বাসন থেকেই পিএলও নেতৃত্ব দেন।
পরে অসলো চুক্তির জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।

বেনিতো মুসোলিনি — সহিংস পরিণতির প্রতীক

ফ্যাসিবাদী ইতালির নেতা মুসোলিনিকে ১৯৪৫ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং তার মরদেহ জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এর মধ্য দিয়ে ইতালিতে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে।

নিকোলাই ও এলেনা চাউশেস্কু — বিপ্লবের কঠোরতম পরিণতি

১৯৮৯ সালের রোমানিয়ান বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত চাউশেস্কু দম্পতিকে সামরিক ট্রাইব্যুনাল দ্রুত বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এই ঘটনাই রোমানিয়াকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যায়।

সাদ্দাম হোসেন — শাসনের অবসান ও অস্থির ইরাক

দুজাইল হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০০৬ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
সাদ্দামের পতনের পর ইরাকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং আইএস-এর উত্থান ঘটে।

জুলফিকার আলী ভুট্টো — দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক মৃত্যুদণ্ড

১৯৭৯ সালে পাকিস্তানি নেতা ভুট্টোকে হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়—যার ন্যায্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে এখনও বিতর্ক আছে।
ভুট্টোর মৃত্যু পাকিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি করে।

আন্তর্জাতিক