ইউরোপে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই, লিখিত নিশ্চয়তা দিতেও প্রস্তুত: পুতিন

ইউরোপে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই, লিখিত নিশ্চয়তা দিতেও প্রস্তুত: পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউরোপের কোনো দেশকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা মস্কোর নেই এবং প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে তিনি লিখিত নিশ্চয়তাও দিতে প্রস্তুত। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া ইউরোপে সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছে—এমন বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মিথ্যা’। কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও)-এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন এসব মন্তব্য করেন।

সম্মেলনস্থলে দেওয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, রাশিয়ার ওপর ইউরোপে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ ‘হাস্যকর’। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার সামরিক নীতি প্রতিরক্ষামূলক এবং আগ্রাসী উদ্দেশ্যে পরিচালিত নয়। পুতিন বলেন, ‘আমাদের এমন কোনো উদ্দেশ্য কখনো ছিল না। কিন্তু যদি কেউ এটি লিখিতভাবে জানতে চায়, আমরা তা দিতে পারি। এতে কোনো প্রশ্নই নেই।’ তাঁর বক্তব্যকে ঘিরে ইউরোপীয় নেতারা সংশয় প্রকাশ করেছেন, কারণ ইউক্রেনে আগ্রাসনের আগে ২০২২ সালে রাশিয়া বারবার হামলার ইচ্ছা অস্বীকার করেছিল।

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ ও সম্ভাব্য শান্তি উদ্যোগ নিয়েও পুতিন মতামত জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত একটি খসড়া শান্তি প্রস্তাবকে ‘ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি’ হিসেবে দেখতে আগ্রহী বলে জানান। পুতিন বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করেন যে প্রয়োজন হলে রুশ বাহিনী অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং নতুন অঞ্চল দখলও করতে পারে।

শান্তির শর্ত হিসেবে পুতিন পুনর্ব্যক্ত করেন যে ইউক্রেনের সেনাদের পূর্বাঞ্চলের দনবাস অঞ্চলে—বিশেষত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে সরে যেতে হবে। তিনি বলেন, কিয়েভ যদি এসব এলাকা ছেড়ে না দেয়, তাহলে রাশিয়া সামরিক উপায়ে পরিস্থিতি ‘নিজেদের পক্ষে নিশ্চিত’ করবে। পুতিনের দাবি, ইউক্রেনের দখলে থাকা সব ভূখণ্ড থেকে প্রত্যাহার না হলে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুতিনের এই শর্ত বাস্তবায়ন করা হলে তা কিয়েভের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং রাজধানীর দিকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার পথ উন্মুক্ত করবে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের জানিয়েছেন, ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার চাপ তাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষার জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ন্যাটো সদস্য দেশগুলো পূর্ব সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং ইউক্রেনকে সহায়তায় তাদের ভূমিকা বৃদ্ধি করেছে। পুতিনের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে অনেক বিশ্লেষক রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন, যদিও ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, আগামি পরিকল্পনা সম্পর্কে রাশিয়ার আশ্বাসকে সরাসরি গ্রহণ করা যাবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের শর্ত—বিশেষ করে দনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি—চলমান আলোচনার সম্ভাবনাকে জটিল করে তুলতে পারে। এই অঞ্চলগুলোতে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র সংঘর্ষ চলছে এবং উভয় পক্ষই উল্লেখযোগ্য সামরিক অবস্থান গড়ে তুলেছে। ফলে এ ধরনের প্রত্যাহার বাস্তবায়ন কিয়েভের জন্য রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কঠিন।

অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, দনবাসের রুশভাষী জনগণকে ‘রক্ষা করা’ তাদের লক্ষ্য এবং এসব অঞ্চল রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’। মস্কো বলছে, ইউক্রেন যদি এসব এলাকা থেকে সরে যায়, তাহলে যুদ্ধবিরতির পথ খুলে যাবে এবং আলোচনার পরিবেশ উন্নত হবে।

পুতিনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্র যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে রাশিয়ার প্রস্তাব মূল্যায়ন করছেন। তবে তারা বলছেন, শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে হলে তা আন্তর্জাতিক আইন ও ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার জন্য যে বিস্তৃত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে, তার ওপর পুতিনের সর্বশেষ মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে কিয়েভ জানিয়েছে, তারা কোনো এমন শর্ত গ্রহণ করবে না যেটি ভবিষ্যতে তাদের উপর নতুন আক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক