ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতের আমির হিসেবে পুনরায় শপথ নিলেন

ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতের আমির হিসেবে পুনরায় শপথ নিলেন

 

রাজনীতি ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান নতুন করে ২০২৬-২০২৮ মেয়াদের জন্য শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ করেছেন। মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি পুনরায় নির্বাচিত আমির হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় তিনি বারবার আবেগে ভেঙে পড়েন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম। তিনি ডা. শফিকুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথবাক্য পাঠ করান।

জামায়াতের আমির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ৯ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে। এই নির্বাচনে দলের ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯২ জন রুকন (শপথধারী সদস্য) গোপন ভোটের মাধ্যমে অংশ নেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট প্রাপ্তির কারণে ডা. শফিকুর রহমান টানা তৃতীয়বারের মতো দলের আমির নির্বাচিত হন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি দুইদিনব্যাপী অধিবেশনের (২৮ ও ২৯ নভেম্বর) অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণের পরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তিনি নিজেকে এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য মনে করেন না। তিনি উল্লেখ করেন, “এই মজলুম সংগঠনে দীর্ঘ সময় ধরে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের হাতে যে মানুষ তৈরি হয়েছে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে অনেক যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ সহকর্মী রয়েছেন। তার পরেও সম্মানিত সদস্যবৃন্দ আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।”

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, বিগত সরকার জামায়াত এবং তার নেতাদের ওপর নানা ধরনের অন্যায় ও জুলুম চালিয়েছে। “জেলখানা ছিল আমাদের প্রথম বাসস্থান। বারবার আমাদের আটক করা হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো সত্যিকারের অভিযোগ ছিল না। অভিযোগ একটাই, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতাম। তবে সেই প্রতিবাদও আমরা স্বস্তির সঙ্গে করতে পারতাম না। আমাদের ওপর নানা অপশাসন, কালো আইন ও হুকুম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামীর এই বার্ষিক অধিবেশন ও পুনঃনির্বাচিত আমিরের শপথ গ্রহণ দলীয় কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনী প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন নেতৃত্বের সমন্বয় বৃদ্ধি করবে। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি ও সমর্থন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের গুরুত্বকে আরও প্রমাণ করেছে।

এবারের নির্বাচন ও শপথ গ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ও নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক সমন্বয়ের দিক নির্দেশনার প্রতিফলন। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সদস্য ও কার্যকরী কর্মকর্তারা শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে সমন্বয় রেখে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা, নেতৃত্বের স্থায়িত্ব এবং সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রদর্শিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আয়োজন রাজনৈতিক দলের স্থায়িত্ব ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভ্যাসকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাজনীতি