জেলা প্রতিনিধি
জনপ্রিয় পর্যটনগন্তব্য সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে চলতি মৌসুমের প্রথম যাত্রায় কক্সবাজার থেকে তিনটি জাহাজ রওনা হয়েছে সোমবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া এসব জাহাজে প্রায় ১২শ’ পর্যটক ভ্রমণে অংশ নেন। গত ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও নভেম্বর মাসে সেখানে রাত্রিযাপনের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। ডিসেম্বরের শুরুতে রাত্রিযাপনের অনুমতি ফিরলে এ প্রথম সমুদ্রপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হলো।
সোমবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে উঠতে ঘাটে ভিড় করেন। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় টিকিট দেখিয়ে জাহাজে প্রবেশের আগে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে উপহার হিসেবে পরিবেশবান্ধব পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়। যাত্রীরা নির্ধারিত আসনে বসার পর জাহাজগুলো নির্ধারিত সময়েই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে রাত্রিযাপনের অনুমতি বহাল থাকবে। যাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে; কিউআর কোডবিহীন টিকিটকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
জাহাজ মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, চলতি মৌসুমে যাত্রী পরিবহনের জন্য ছয়টি জাহাজ অনুমতি পেয়েছে। যাত্রীসংখ্যার আনুপাতিক হার বিবেচনায় প্রথম দিনে তিনটি জাহাজ যাত্রা করছে। তিনি বলেন, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা ও নাব্যতা বিবেচনায় প্রতিদিনের যাত্রার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর পর জাহাজগুলো বিকেলে আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে ফিরবে।
গত বছর থেকে টেকনাফ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ সমুদ্রপথ অতিক্রম করে দ্বীপে পৌঁছাতে পর্যটকদের বেশি সময় লাগছে। অনেক অভিজ্ঞ ভ্রমণকারী এ যাত্রাকে তুলনামূলক ক্লান্তিদায়ক মনে করছেন, তবে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণের কষ্ট পুষিয়ে দেবে বলে আশা করছেন অনেকে।
যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাটে প্রবেশের সময় তল্লাশি এবং যাত্রাপথে নজরদারি জোরদার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার রিজিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সমুদ্রপথে জাহাজে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পর্যটকদের সহায়তা দিতে সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গত অক্টোবরে সরকার ১২টি নির্দেশনা জারি করে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষিদ্ধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজন করা যাবে না, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়াসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে এমন সব কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মৌসুমের প্রথম দিনের জাহাজ চলাচল পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। তিনি পর্যটক, জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
গত নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ কিছুটা কমে যায়, ফলে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা করেনি। ডিসেম্বর থেকে নিয়ম শিথিল হওয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে এবং মৌসুমজুড়ে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন রুটে নিয়মিত যাত্রী চলাচল বজায় থাকবে।


