ঢাকা, সোমবার: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালত আজ শেখ রেহানাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। একই মামলায় তার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জন অন্যান্য আসামিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করেন। আদালত প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে; জরিমানার পরিশোধ না হলে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড কার্যকর হবে।
মামলায় অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় অসংগতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটিয়ে বেআইনি সুবিধা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় আসামিরা নিয়ম ভঙ্গ করে প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন।
এই মামলার প্রাথমিক তদন্ত ও অনুসন্ধান পরিচালনা করে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আসামিরা সরকারি নীতি এবং পরিকল্পনা লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্লট বরাদ্দের সুযোগ ব্যবহার করেছেন। মামলায় বিভিন্ন নথি ও সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা আদালতে প্রমাণের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি আরোপিত জরিমানার মাধ্যমে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আর্থিক শাস্তিও প্রদান করেছে। এই রায় দেশের প্রশাসনিক ও পরিকল্পনামূলক প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রয়াসের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রায় ভবিষ্যতে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি রাজধানীর সম্প্রসারণ ও নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ঢাকা শহরের বাড়তি জনসংখ্যা ও আবাসনের চাহিদা মেটানো, সুষ্ঠু নগরায়ন নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সমন্বিত প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়া তৈরি করা। তবে তদন্তে দেখা যায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনিয়ম এবং স্বার্থান্বেষী কার্যক্রম প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করেছিল।
আদালতের এই রায় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি সরকারের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দমন নীতিতে সতর্কতার বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া, ভবিষ্যতে প্রকল্প বরাদ্দ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার দিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
শেখ রেহানা ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দেশের প্রশাসনিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে আইনগত প্রয়াসের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।


