সরকারি সিদ্ধান্তে এনজিও খাতে বৈদেশিক অনুদান ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের শিথিলতা

সরকারি সিদ্ধান্তে এনজিও খাতে বৈদেশিক অনুদান ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের শিথিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ২৯ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ ও ব্যবহারের নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আইনের বিভিন্ন বিধান সহজীকরণ করে অনুদান গ্রহণের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও অংশীজনবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সভায় ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। খসড়ায় বিদ্যমান আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন করে এনজিও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ, অনুদান অবমুক্তির ক্ষেত্রে পূর্বের বাধ্যবাধকতা হ্রাস এবং ক্ষুদ্র পরিসরের অনুদান ব্যবস্থাপনাকে ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক অনুদান গ্রহণে আলাদা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না, যা ক্ষুদ্র ও মধ্যম পর্যায়ের সংস্থাগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে দ্রুততর করবে।

বৈদেশিক অনুদান ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের শিথিলতা এনজিও খাতের কর্মপরিধি প্রসার, উন্নয়ন কার্যক্রমে সময়োপযোগিতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে সহায়ক হবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এনজিওসমূহ প্রকল্প অনুমোদন ও অনুদান ছাড়ের ক্ষেত্রে জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে বাস্তবায়ন ধীরগতির মুখে পড়ছিল। নতুন সংশোধনী কার্যকর হলে এসব প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সভায় আরও আলোচিত হয় ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া, যা প্রথমবারের মতো পরিষদে উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুলিশ প্রশাসনের কাঠামো ও কার্যক্রমের আধুনিকায়ন এবং জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা জোরদারে বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পরিষদ খসড়াটি আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা ও সংশোধন শেষে পরবর্তী সভায় পুনরায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে দেশব্যাপী পুলিশি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নতুন কাঠামো প্রণয়ন সম্ভব হবে বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

সভায় প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আরব আমিরাতে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও সরকারি তৎপরতার ফলে অবশিষ্ট ২৪ জন বাংলাদেশিকে অচিরেই মুক্তি দেওয়া হবে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে তিনি পরিষদকে জানান। এ পদক্ষেপটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ও আলোচনায় আসে। তার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়, যা পরিচালনা করেন ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা কামনায় সরকারি বৈঠকে এ ধরনের প্রার্থনা দেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো এনজিও খাত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ—এই তিন ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বৈদেশিক অনুদান ব্যবস্থাপনার নতুন কাঠামো কার্যকর হলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক গতিশীলতা অর্জন করবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা আরও জোরদার করতে পারবে। একই সঙ্গে পুলিশের কাঠামো ও কার্যক্রমে প্রস্তাবিত সংস্কার ভবিষ্যতে জননিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

উপদেষ্টা পরিষদের এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ