খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার: এভারকেয়ার হাসপাতালে বাড়তি ব্যবস্থা

খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার: এভারকেয়ার হাসপাতালে বাড়তি ব্যবস্থা

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সরকারিভাবে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ মর্যাদার নিরাপত্তা বিবেচনার প্রেক্ষাপটে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে হাসপাতালটির সামনের এলাকায় ব্যারিকেড স্থাপন ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েনের ঘটনা নজরে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুত্ব দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপরায়ের পর্যায়ে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বা ব্যাখ্যা জানানো হতে পারে।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে এই নিরাপত্তা উদ্যোগটি সরকারিভাবে ‘ভিভিআইপি নিরাপত্তা’ কাঠামোর অধীনে হতে পারে। তবে তাদের কেউই এর সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। আকস্মিকভাবে নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দলটির ভেতরে নানা আলোচনা সৃষ্টি করেছে। নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে নানামুখী রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বিবেচনা থাকতে পারে; যদিও এসব বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

দিবাগত রাতের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সোমবার রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে চেয়ারপারসনের সিসিইউতে প্রবেশ করেন এবং বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন। উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, ওই সময় খালেদা জিয়া মহাসচিবের সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে কথাবার্তা বলেন, যা তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কিছুটা ইতিবাচক বার্তা দেয়।

চিকিৎসাসংক্রান্ত সূত্র মতে, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যে ওষুধ খালেদা জিয়াকে দেওয়া হচ্ছে, তার প্রভাব ইতিবাচকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে বলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য থেকে জানা যায়। এটি তার শারীরিক অবস্থার ক্রমোন্নতির একটি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও চিকিৎসকেরা পরিস্থিতি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও চূড়ান্ত মন্তব্য করতে রাজি নন।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এবং উন্নত মনিটরিং সুবিধার জন্য তাকে নিয়মিতভাবে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার ওঠানামা রাজনৈতিক অঙ্গনে সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বিশেষ করে নির্বাচনপূর্ব বা উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যে কোনও পদক্ষেপ জাতীয় গুরুত্বের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সরকারিভাবে ভিভিআইপি নিরাপত্তা প্রদান সাধারণত খুব সীমিতসংখ্যক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, যাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বিশেষভাবে বিবেচনায় থাকে। যদি সরকার খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের নিরাপত্তা কাঠামো চূড়ান্ত করে, তবে তা প্রশাসনিকভাবে নতুন একটি অধ্যায় তৈরি করবে। কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিরাপত্তার নির্দিষ্ট সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও, ভিভিআইপি মর্যাদার নিরাপত্তা অতিরিক্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিএনপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বৃদ্ধি কেন ঘটছে—এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অস্পষ্ট থাকায় দলের ভেতরে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও অভিমতের উদ্ভব হয়েছে। তবে দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থান বা মন্তব্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত এবং হাসপাতালে নিরাপত্তা বৃদ্ধির সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বিষয়টি কেবল চিকিৎসা-সংক্রান্ত নয়; বরং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রকাশের পরই পরিষ্কার হবে নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং এটি সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে, হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েনের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, নিরাপত্তাজনিত কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে তা সমন্বয় করা হবে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও তার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আগামী কয়েক দিনে জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ