জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের জন্য চালু করা আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোট ব্যবস্থায় নিবন্ধনের সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ২০২ জন প্রবাসী ভোটার হিসেবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৮ জন পুরুষ এবং ১৬ হাজার ৪৭৪ জন নারী রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশে বসবাসরত ভোটারদের বাইরে নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণির মানুষের জন্য এই বিকল্প ভোটদান ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রবাসী ভোটার, আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। এর জন্য নির্ধারিত অ্যাপে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র আপলোড করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন সম্পন্ন হলে প্রবাসীদের প্রদত্ত ঠিকানায় ডাক বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট দেশের ডাক সেবা ব্যালট পেপার পৌঁছে দেবে। ব্যালট পাওয়ার পর ভোটার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদান করে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানায় ডাকযোগে তা ফেরত পাঠাবেন। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ডাকনির্ভর হওয়ায় ব্যালট পাঠানো ও ফেরত পাওয়ার বিষয়টি সময়মতো সম্পন্ন করতে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত ৫০ লাখ ভোটারকে এই পদ্ধতির আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের সরাসরি ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ না থাকায় বিকল্প পদ্ধতি চালুর বিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল। অবশেষে প্রযুক্তিনির্ভর পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে ইসি।
ইসির ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মহাদেশের প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করছেন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, হংকং, মিসর, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, গিনি, মরক্কো, চিলি, আর্জেন্টিনা, পেরু, তাইওয়ানসহ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংখ্যার পাশাপাশি তাদের ভোটের প্রতি আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে।
প্রযুক্তিনির্ভর এই ভোটিং ব্যবস্থা নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করতে ইসি একটি সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠন করেছে। এটি ব্যালট পাঠানোর সময়সূচি, ভোট সংগ্রহের অগ্রগতি, ফেরত ব্যালট যাচাই এবং গণনার প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ইসি প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোটার ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া আধুনিকায়নে কাজ করছে। প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নির্বাচনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সহায়তা করবে বলে নির্বাচন কমিশন আশা করছে।
প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস, হাইকমিশন এবং স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠনসমূহকে তথ্যপ্রদান, সহায়তা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কাজেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এতে সময়মতো ব্যালট প্রেরণ এবং ফেরত সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা বাড়বে বলে ইসি মনে করছে। নিবন্ধন সময়সীমা শেষ হওয়ার পর মোট কতজন প্রবাসী পোস্টাল ব্যালটের আওতায় আসবেন, তা নির্ধারিত সময়ের পরই নিশ্চিত হবে।


