জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সোমবার রাতের এই বৈঠকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সভায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের কর্মকৌশল এবং নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছে, যার মধ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি এবং মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে এবং তিনি শিগগিরই দেশে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি জানান, বিষয়টি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নেতৃত্ব কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান গত কয়েক বছর লন্ডনে অবস্থান করে দলের নীতি নির্ধারণ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তে অংশ নিচ্ছেন। তিনি নিয়মিতভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুক্ত থাকেন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতে, তার দেশে ফেরা দলীয় কর্মীদের মধ্যেও প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময়ে নেতৃত্বের সরাসরি অংশগ্রহণকে তারা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রচারণা, প্রার্থী বাছাই, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির কৌশল এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগসহ নানাবিধ বিষয় স্থান পেয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়েও বিশদ পর্যালোচনা করা হয়। দলের নেতারা বিভিন্ন অঞ্চলের সাংগঠনিক প্রস্তুতির অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা চান।
বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্যতা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে বিএনপির ভেতরে নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও সক্রিয় করতে পারে, অন্যদিকে আইনগত ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠক শেষে কোনো অতিরিক্ত মন্তব্য করতে চাননি এবং এটি দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের বিষয় বলেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, নেতৃত্বের কার্যক্রম এবং নির্বাচনী কৌশল সামগ্রিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে। বিএনপি ইতোমধ্যে প্রচার কার্যক্রম ও ভোটার সংযোগ বৃদ্ধি নিয়ে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। মাঠপর্যায়ের নেতাদের অভিমত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রচারণায় সুশৃঙ্খল অংশগ্রহণ, ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি সক্রিয় করা এবং কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনা দ্রুত মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রেখেছে, তার প্রেক্ষাপটে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী দিনগুলোতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিশীলতার কারণে স্থায়ী কমিটির সভা নিয়মিত এবং প্রয়োজনে অতিরিক্তভাবে আয়োজন করা হবে। নেতারা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সমন্বিত ও দ্রুততর করতে অনলাইন এবং সশরীরে উপস্থিতির সমন্বয়ে বৈঠক পরিচালনা করা হবে।
তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে দলের ভেতরে প্রত্যাশা থাকলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে কবে কার্যকর হবে, সে সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এখনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়নি। তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে বলে বৈঠক-পরবর্তী মন্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।


