খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে গভীর রাতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে গভীর রাতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল

 

রাজনীতি ডেস্ক

রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে সোমবার রাতে সেখানে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাতের এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তারা হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক দলের সঙ্গে চলমান চিকিৎসা, স্বাস্থ্য–পর্যবেক্ষণ এবং সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।

চিকিৎসক দলের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা, চলমান চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, সম্ভাব্য জটিলতা ও চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। দলীয় নেতারা এ সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চলমান চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হন। হাসপাতালের মেডিক্যাল টিম খালেদা জিয়ার শারীরিক সূচক, ব্যবহৃত ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তার বিষয়ে দলীয় নেতাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে বলে জানা গেছে।

সফর শেষে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য না করে নীরবে স্থান ত্যাগ করেন। তিনি দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনো বক্তব্য না দেওয়ায় তার এই রাতের সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন আলোচনার জন্ম হয়। তবে দলীয় অন্য সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক শারীরিক পরিবর্তন ও চিকিৎসা প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জেনে নেওয়ার জন্যই এই সফর ছিল।

সোমবার দিনব্যাপী হাসপাতাল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা পূর্বের তুলনায় আরও জোরদার করা হয়। হাসপাতালের প্রধান ফটক ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং আগত দর্শনার্থীদের প্রবেশে কঠোরতা আরোপ করা হয়। হাসপাতাল সূত্র মতে, চিকিৎসা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। রোগীর গোপনীয়তা ও চিকিৎসাবিষয়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। লিভার, কিডনি, শ্বাসপ্রশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন–সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি তিনি আরও কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন। বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা সীমিত হওয়ায় তার চিকিৎসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়। সরকার অনুমোদন দিলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে বলে দলীয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পূর্বে জানিয়ে আসছেন।

হাসপাতালের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল টিম তার সার্বিক চিকিৎসা পরিচালনা করছে। এই টিম নিয়মিতভাবে তার শারীরিক সূচক পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছে। দলীয় নেতারা চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় চিকিৎসা–সংক্রান্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি, পরবর্তী ধাপ এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের বিষয়েও অবহিত হন বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বরাবরই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার সামান্য পরিবর্তনও রাজনৈতিক দলগুলো, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আগ্রহ সৃষ্টি করে। বর্তমান পরিস্থিতি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়মিতভাবে তার চিকিৎসা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে চিকিৎসকদের পরামর্শ বিবেচনা করছে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি আগামী দিনগুলোতে দলের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মকৌশলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। চিকিৎসা–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং হাসপাতালের সামগ্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণে দলীয় নেতাদের ধারাবাহিক উপস্থিতি ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনেরা তার পাশে থাকতে হাসপাতালে নিয়মিত যাচ্ছেন।

চিকিৎসক দল তার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে। চিকিৎসা–প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করতে তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করছেন। আগামী কয়েক দিন তার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাজনীতি