আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত এক ফোনালাপে ট্রাম্প এ আহ্বান জানান বলে জানা গেছে। মাদুরো সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজ অবস্থান বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন।
দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। কথোপকথনটি ঠিক কোন তারিখে হয়, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ না করা হলেও নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আলোচনাটি হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প নিজেই আলোচনা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি সংক্ষেপে বলেন, এটি ছিল একটি স্বাভাবিক ফোনালাপ; এর ভালোমন্দ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
ফোনালাপ সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ট্রাম্প আলোচনায় মাদুরোকে জানিয়ে দেন যে রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হলে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। তিনি মাদুরোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং দেশত্যাগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে ইঙ্গিত করেন। আলোচনায় ট্রাম্প জানান, রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানের পথ হিসেবে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরই হতে পারে উত্তরণের সর্বোত্তম উপায়।
প্রতিউত্তরে মাদুরো পদত্যাগ বা নির্বাসনে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখাই তার অঙ্গীকার। তবে আলোচনায় তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাঠামো পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাজনৈতিক প্রশাসনের বাইরের কিছু ক্ষমতা সাময়িকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে রাখা যেতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। যদিও এ বিষয়ে তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেননি।
আলোচনা শেষে দুই নেতার মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। এ সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞাসহ কয়েকটি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর মাদুরো পুনরায় ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক যোগাযোগে নতুন করে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
ফোনালাপটি আয়োজনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতা করেছে বলে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভেনেজুয়েলা সংকটের সমাধানে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প-মাদুরো ফোনালাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কোনো দেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
সংকটের পটভূমিতে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পতন ও মানবিক বিপর্যয় দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং ব্যাপক অভিবাসনের মতো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এসব পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মাদুরো সরকারের প্রতি চাপ বাড়িয়ে আসছে, অন্যদিকে রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ মাদুরো সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ফলে সংকটটি আঞ্চলিক কূটনীতি ছাড়িয়ে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বক্তব্যে মাদুরো জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার জনগণ কোনোভাবেই বাহ্যিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব অটুট রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। তার এই বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অনমনীয়তার প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকদের মত।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সরাসরি কোনো বৃহৎ সামরিক অভিযান চালাবে না। তবে দেশটির ওপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির পরিকল্পনা অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় ট্রাম্পের দেশত্যাগের আহ্বান ভেনেজুয়েলার ভেতরে ও বাইরে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। মাদুরো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফলে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সংকটের প্রভাব আগামী দিনগুলোতে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। দুই নেতার সাম্প্রতিক যোগাযোগের ফলাফল না থাকায় এবং কূটনৈতিক চ্যানেল স্থবির হয়ে পড়ায় পরিস্থিতির উন্নতি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।


