নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট বাজারে আসছে বৃহস্পতিবার

নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট বাজারে আসছে বৃহস্পতিবার

অর্থনীতি ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ সিরিজের অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে নতুন নকশার ৫০০ টাকার নোট ইস্যু করতে যাচ্ছে। এই নোটটি প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে বাজারে ছাড়া হবে এবং পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য শাখার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নোটটির নকশা, রঙ, নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ও উপস্থাপনার দিক থেকে এটিকে আধুনিক মানে উন্নীত করা হয়েছে, যাতে আর্থিক লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব আরও সুদৃঢ় হয়।

গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর স্বাক্ষরিত নতুন নোটটির আকার ১৫২ মিলিমিটার বাই ৬৫ মিলিমিটার এবং প্রধান রঙ সবুজ। নোটের মুখ্য পাশে বাম দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি এবং মাঝের পটভূমিতে ফুটন্ত শাপলা ফুল ও পাতার নকশা ব্যবহার করা হয়েছে। অপর পৃষ্ঠায় চিত্রায়িত করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দৃশ্য, যা দেশের বিচারব্যবস্থার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।

নোটটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি স্বতন্ত্র সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জলছাপ, যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি ও উজ্জ্বল ইলেক্ট্রোটাইপ ‘৫০০’ সংখ্যা যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম। নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও সহজে নোটটির সত্যতা যাচাই করতে পারেন এবং জাল নোটের ঝুঁকি কমে।

নোটের ডান দিকের ওপরের কোনে থাকা ‘৫০০’ সংখ্যাটি অপটিক্যালি ভ্যারিয়েবল কালিতে মুদ্রিত। নোটটি কাত করলে রঙ সবুজ থেকে নীল রূপে পরিবর্তিত হয় এবং ভেতরে তির্যক আকারে আরেকটি ‘৫০০’ সংখ্যা প্রতিফলিত হয়। এই প্রযুক্তি আধুনিক ব্যাংকনোট নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যবহারকারীদের নোট শনাক্তে визуাল সহায়তা প্রদান করে।

নতুন নোটে ৪ মিলিমিটার চওড়া একটি টুইস্টেড সিকিউরিটি থ্রেড ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে লাল এবং উজ্জ্বল সোনালি রঙের সমন্বয় রয়েছে। ব্যবহারকারী নোট কাত করলে থ্রেডের লাল অংশ সবুজে পরিণত হয় এবং ‘Taka 500’ লেখা ভাসমানভাবে দেখা যায়। সোনালি অংশে চলমান রেইনবো রঙের বার প্রতিফলিত হয়, যা নোটটিকে অধিক নিরাপদ ও আধুনিক ডিজাইনে উপস্থাপন করে।

নোটের নিচের বর্ডারের সবুজ নকশায় লুকানো ‘৫০০’ সংখ্যাটি অনুভূমিকভাবে ধরলে দৃশ্যমান হয়। গভর্নরের স্বাক্ষরের পাশে রাখা সি-থ্রু ‘৫০০’ সংখ্যা আলোয় ধরলে পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। এই বৈশিষ্ট্য মূলত উচ্চমানের নিরাপত্তা প্রযুক্তি, যা কাগজের দুই পাশের মুদ্রণকে নিখুঁতভাবে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে নোটের ডান নিচের কোনে পাঁচটি ছোট উঁচু ডট যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি শহীদ মিনার, ব্যাংকের নাম, তির্যক লাইন ও সুপ্রিম কোর্টের ছবিসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো রাফ ইনট্যালিও মুদ্রণে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে স্পর্শের মাধ্যমে নোটের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য অনুভব করা সহজ হবে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেনদেনে অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাবে।

নোটের দুই পাশে ইউভি কিউরিং ভার্নিশ ব্যবহার করা হয়েছে, যা নোটকে চকচকে অনুভূতি প্রদান করে এবং কাগজের স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তোলে। ইউভি ডিটেক্টরে নোট ধরলে শাপলা ফুলের ছবি মেজেন্টা রঙে জ্বলে ওঠে এবং কাগজে ছড়ানো লাল, নীল ও সবুজ রঙের ক্ষুদ্র তন্তুগুলো সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। এগুলো বিশেষ নিরাপত্তা উপাদান, যা প্রশিক্ষিত ব্যবহারকারী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা সহজেই শনাক্ত করতে পারেন।

নোটের বিভিন্ন স্থানে মাইক্রো প্রিন্টিংয়ে ‘BANGLADESH BANK’ লেখা যুক্ত করা হয়েছে, যা শুধু লেন্সের সাহায্যে পড়া সম্ভব। এটি সূক্ষ্ম নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের একটি অংশ, যা জাল মুদ্রা প্রস্তুতকারীদের জন্য অতিরিক্ত বাধা সৃষ্টি করে।

এর আগে এই স্থাপত্য সিরিজে ১০০০, ১০০, ৫০ এবং ২০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, একই সিরিজের অংশ হিসেবে ৫০০ টাকার নতুন নোট চালুর মাধ্যমে দেশের প্রচলিত ব্যাংকনোট ব্যবস্থায় নান্দনিকতা ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই আরও উন্নতি ঘটবে। নতুন নোটটি পুরোনো নোটের সঙ্গে সমানভাবে বৈধ থাকবে এবং বাজারে ধীরে ধীরে প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ