জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮৯তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৬০তম বিশেষ কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারী ক্যাডেটদের পুরস্কার প্রদান করেন।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেনাবাহিনী প্রধান নবীন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ওপর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হলো। তিনি উল্লেখ করেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণে সামরিক নীতি, মূল্যবোধ ও শৃঙ্খলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশপ্রেমকে সব সিদ্ধান্তের মূলভিত্তি ধরে সাহসিকতার সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতা আরও বাড়ানোর ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
বক্তব্যে সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক যুদ্ধকৌশল, পরিবর্তিত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা একটি দক্ষ, সক্ষম ও যুগোপযোগী বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম আধুনিকায়ন এবং নেতৃত্ব উন্নয়নকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ অনুষ্ঠানের মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজে অংশ নেন ৮৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের ১৮৪ জন এবং ৬০তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ২০ জন অফিসার ক্যাডেট। মোট ২০৪ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন, যার মধ্যে ১৮৩ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আজমাইন ইশরাক সেরা চৌকশ ক্যাডেট হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ অর্জন করেন। সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ও লাভ করেন। কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তারা পরে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন।
শপথ গ্রহণের পর নবীন অফিসারদের র্যাঙ্ক-ব্যাজ পরানোর মাধ্যমে তাদের সামরিক জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। অনুষ্ঠানে আগত পিতা-মাতা, অভিভাবক ও অতিথিরা এ ব্যাজ প্রদান কার্যক্রমে অংশ নেন, যা নবীন কর্মকর্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। সামরিক জীবনে তাঁদের অঙ্গীকার, শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সূচনা এই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া এবং বিএমএ’র কমান্ড্যান্ট। আনুষ্ঠানিক প্রটোকল অনুসরণ করে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে কুচকাওয়াজের বিভিন্ন পর্ব সম্পন্ন হয়।
এ আয়োজনে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, অসামরিক কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি, সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পরিবার-পরিজন এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তারা দেশের ভবিষ্যৎ সামরিক নেতৃত্ব গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেন। অনুষ্ঠানের বর্ণাঢ্য উপস্থাপনা, সামরিক শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে পুরো প্যারেড গ্রাউন্ডে এক আনুষ্ঠানিক ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিএমএ থেকে কমিশনপ্রাপ্ত নতুন কর্মকর্তারা দেশের নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং বিভিন্ন জাতীয় দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে কীভাবে ভূমিকা রাখবেন—তা নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রশিক্ষণ সমাপনকারী এসব নতুন অফিসারদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নতুন উদ্যম ও সক্ষমতা যুক্ত হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।


