অ্যাশেজে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য স্টোকসের প্রকাশ্য দুঃখপ্রকাশ

অ্যাশেজে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য স্টোকসের প্রকাশ্য দুঃখপ্রকাশ

খেলাধুলা ডেস্ক

অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে পার্থে বড় ধরনের পরাজয়ের পর নিজস্ব মন্তব্যের কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটারদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ‘হ্যাজ-বিন’ শব্দটি ব্যবহার করায় তাকে নানা মহলে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। শেষ পর্যন্ত এই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন স্টোকস।

প্রথম টেস্টের আগে ইংল্যান্ড দলের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দেশের চার সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার—ইয়ান বোথাম, জিওফ বয়কট, গ্রাহাম গুচ ও মাইকেল ভন। তাদের মতে, সিরিজ শুরুর আগে ধীরগতির উইকেটে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলা ছিল প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয়। বাউন্সি উইকেটের কন্ডিশনে পার্থের মতো মাঠে খেলার আগে দলের আরও মানানসই প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন তারা। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার পিচের গতি ও বাউন্স মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্টোকসদের অনুশীলন পরিকল্পনা ছিল অপর্যাপ্ত—এমন দাবিও ওঠে।

সাবেকদের এই সমালোচনার পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে স্টোকস মন্তব্য করেন যে, এসব সমালোচক ‘হ্যাজ-বিন’—অর্থাৎ যারা একসময় সফল ছিলেন, কিন্তু এখন আর কার্যকর নন। তার এই মন্তব্য অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দেয়। বিতর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় অবশেষে নিজের ভুল স্বীকার করেন স্টোকস। তিনি বলেন, তিনি ‘সম্পূর্ণ ভুল শব্দ’ ব্যবহার করেছিলেন এবং মুহূর্তের চাপে ওই শব্দটি মুখে চলে আসে। স্টোকস স্বীকার করেন যে শব্দটি অশোভন ও অসম্মানজনক, এবং তিনি তা বলতে চাননি।

স্টোকস বলেন, ভবিষ্যতে তিনিও একসময় সাবেক খেলোয়াড় হবেন, সেই বিবেচনায় মন্তব্যটি আরও বেশি অনুপযুক্ত ছিল। তিনি সব ধরনের সাবেক খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং স্বীকার করেন যে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সমালোচনা দলকে উন্নতিতেই সহায়তা করে। তার মতে, ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে সরাসরি দুঃখপ্রকাশ জরুরি ছিল, বিশেষ করে যাদের প্রতি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের সম্মানের কথা বিবেচনায়।

এদিকে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দর্শন ‘বাজবল’ নিয়েও সমালোচনা করেন বোথাম ও বয়কট। তাদের মতে, কন্ডিশন বোলার-বান্ধব হলে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলা উল্টো দলের জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। পার্থের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড মাত্র দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩২.৫ এবং ৩৪.৪ ওভার টিকতে সক্ষম হয়, যা এই সতর্কবার্তার সঙ্গেই মিল রয়েছে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানরা শুরুর আক্রমণাত্মক মনোভাব ধরে রাখতে গিয়ে দ্রুত উইকেট হারান, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

সাবেকদের মন্তব্যে স্টোকসের ওপর চাপ আরও বাড়ে যখন দলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের অভিযোগও সামনে আসে। বোথাম ও সাবেক অস্ট্রেলীয় পেসার মিচেল জনসন দাবি করেন, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা নাকি নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী। তবে স্টোকস এই অভিযোগ নাকচ করে জানান, দল কোনোভাবেই অহংকারে ভোগে না এবং সমালোচনাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়। তার মতে, বাহ্যিক সমালোচনা দলের মনোবল ভাঙতে পারে না, বরং তা আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

স্টোকস সমর্থকদের প্রতিও ধৈর্য ধরে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখনও লড়াই বাকি রয়েছে। দলের লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করছে এবং দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিটি খেলোয়াড়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তার মতে, সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করাই দলের প্রধান অগ্রাধিকার, এবং মাঠে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তারা কাজ করছে।

ইংল্যান্ডের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো বাকি ম্যাচগুলোতে নিজেদের ভুল সংশোধন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা। প্রথম টেস্টের ব্যর্থতা কাটিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে নতুন কৌশল নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডার ও বোলিং পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট ভাবতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাউন্সি উইকেটের পরিস্থিতি মোকাবিলায় দল আরও লক্ষ্যভিত্তিক প্রস্তুতি নেবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

স্টোকসের দুঃখপ্রকাশ বিতর্ক কিছুটা প্রশমিত করলেও, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে ইংল্যান্ডকে সমালোচনার জবাব দিতে হবে—এমন প্রত্যাশা রয়েছে সমর্থক ও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের। সিরিজের বাকি অংশে দল কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, তা এখন নজরে রাখবে ক্রিকেটবিশ্ব।

খেলাধূলা