জাতীয় ডেস্ক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় সারা দেশে আজ বুধবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। একইসঙ্গে উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিস কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তাদের দাবি—অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন-গ্রেড সংশোধন ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন। দাবি পূরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না আসায় আরও কঠোর, পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি হিসেবে তারা আজ থেকে শাটডাউন ঘোষণা করেছেন। এ কর্মসূচির ফলে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা মঙ্গলবার বিকালে কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তারা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে ২২ দিন অতিক্রান্ত হলেও কোনো বাস্তব অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। শিক্ষক নেতাদের দাবি, এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সময়সীমা বা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার স্পষ্ট ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তাদের তিন দফা দাবি হলো—সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, দীর্ঘমেয়াদি চাকরিজীবনে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর করা এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শিক্ষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই তিন দফা দাবি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি।
দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা মনে করেন, শিক্ষকদের বর্তমান বেতন কাঠামো ও পদোন্নতির সীমিত সুযোগ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মরত বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের দাবি, সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী অনেক শিক্ষকের পক্ষে বর্তমান কাঠামোর আওতায় পেশাগত উন্নয়ন ও আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে শিক্ষক নিয়োগ, দক্ষতা ধরে রাখা এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির কারণে ইতোমধ্যে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। চলমান বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচিও এর প্রভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চপর্যায়ে শিক্ষকদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করা হলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশজুড়ে লক্ষাধিক শিক্ষক এই পর্যায়ে কর্মরত আছেন। শিক্ষকদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে শিক্ষার্থীদের শেখার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের ওপরও অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কম বয়সী হওয়ায় দীর্ঘ বিরতি তাদের শেখার সক্ষমতা ও মনোযোগে প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান না হলে প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই সমাধান আসবে এবং বিদ্যালয়গুলো স্বাভাবিক পাঠদানে ফিরবে।
পরিস্থিতির অগ্রগতি দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রবাহে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের আলোচনাপ্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্তের ওপর। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


