মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে  হাজির

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির

আইন আদালত ডেস্ক

ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে সবুজ রঙের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। তারা হলেন— র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন এবং র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ।

এ মামলায় আজ ৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন সম্পর্কিত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ শুনানিতে প্রথমে প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার তথ্য উপস্থাপন করা হবে এবং পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবেন। পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা উপস্থিত থাকবেন।

সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনার সময় ঢাকার হাইকোর্টের মূল ফটকসহ ট্রাইব্যুনাল ভবনের আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‍্যাবের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার এপিবিএন সদস্যদেরও তৎপরতা দেখা গেছে।

এর আগে, ২৩ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই দিন সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ তারিখ নিশ্চিত করা হয়। তাদের আইনজীবীরা ভার্চুয়ালি হাজির হওয়ার আবেদন করেছিলেন। মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং অনুপস্থিত পলাতক আসামিদের জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ দাখিল করা হয় ৮ অক্টোবর এবং আদালত তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে, পলাতক আসামিদের হাজির করার জন্য দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না আদালতে উপস্থিত হয়ে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তিনি মৌখিকভাবে এ মামলায় লড়াই না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এই মামলার প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, বিভিন্ন মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। আদালত সব আসামির ক্ষেত্রে আইনসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। মামলার শুরুর প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যায়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন এক গুরুত্বপূর্ণ মামলা।

আইন আদালত